ইহজগতে আমাদের কাজকর্মের দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব। যে কারণে সমাজ নানাবিধ অপকর্ম ও অন্যায় অত্যাচার দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত। পরকালের অনন্ত জীবনে যে কঠিন জবাবদিহিতা ও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে সে ব্যাপারে আমরা মোটেই সচেতন নই। গ্রন্থে ইসলামের কিছু মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে এ দিকটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থের প্রয়োজনে একটি অধ্যায়ে বর্ণিত ‘আমরা কোন পথে’ - ‘কী ঘটছে আমাদের সমাজে’ ইত্যাদির বিষয়ভিত্তিক আলোচনাকালে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর শুধুমাত্র প্রকাশিত তথ্যাদিই ব্যবহার করা হয়েছে। সবার শান্তিতে বসবাসের অধিকার আছে। সে জন্য সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অপরিহার্য এবং বড়, ছোট, ক্ষমতাশালী অথবা দুর্বল সকলকে ন্যায়বিচার চর্চা করতে হবে। ন্যায়বিচারের জন্য মতাদর্শ, ধর্ম, ধনী ও গরীব, শক্তিমান ও দুর্বল নির্বিশেষে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো উচিত - ক্ষমতা বা আধিপত্যবাদের জন্য নয়, একটি ভাল ও নিরাপদ দেশ ও বিশে^ বসবাসের জন্য। বৈধ পথে ক্ষমতারোহণকারী ক্ষমতাবান ও দায়িত্বশীলদের ন্যায়ানুগ ভূমিকা অপরিহার্য - এখন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সমতা, প্রচার মাধ্যমের সংযত আচরণ ও নিরপেক্ষতার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত ভূমিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ন্যায়ানুগ নতুন শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। মানুষের কার্যক্রম-আচরণ ভাগ্যলিপির জন্য নয়; ভাগ্যলিপিতে বিশ^াস মুক্তির পথ নয়- মানুষের ওপর অর্পিত স্বাধীনতা খাঁটি ও বাস্তব; এজন্য রুদ্ধ বিবেক নয় প্রয়োজন জাগ্রত বিবেকের। বিচারপূর্ব ইহকালীন জীবনে সাবধানতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। পরিবার ও সমাজ থেকে এই সচেতনতা শুরু করতে হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও কর্ণধার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, ছাত্র, শিক্ষক, সংবাদকর্মী, অভিভাবক, সমাজের সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে স্বচ্ছতা সহকারে এগিয়ে আসতে হবে সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে Ñ বিশেষ করে অন্যায় অবিচার অপকর্ম থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখে সৎ ও ন্যায়বান হতে হবে। ইতিবাচক ফলের জন্য স্কুল, কলেজের সিলেবাসে কর্মকা-ের দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা এবং অপকর্ম ও অন্যায় অত্যাচার দুর্নীতির কুফলবিষয়ক নিবন্ধ সংযোজন জরুরি। ইসলামের আলোকে পথ নির্দেশনামূলক দাওয়াতী কার্যক্রম আমাদের সবার জন্য অপরিহার্য। বর্তমান গ্রন্থের মূল বাণী আর আহ্বান হচ্ছে পার্থিব জীবনে সচেতন ও সৎকর্মশীল হওয়া। মানবাধিকার রক্ষা, ন্যায়নীতিবোধ সৃষ্টি ও তদনুযায়ী কর্ম সম্পাদনের জন্য যে সচেতনতা প্রয়োজন তা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই গ্রন্থ।
প্রফেসর ড. এ.কে.এম. আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালে বগুড়ায়। প্রফেসর আজহার ১৯৭২ সালে লন্ডন থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় এবং গবেষণা কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে Professor Emeritus - তিনি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসাবে ১১ বছর কর্মরত ছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১৬টি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিত্ব ১৫টি সৃজনশীল গ্রন্থের ও অধ্যায়ের প্রণেতা। এই লেখকের সম্পাদিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কার্যবিবরণী যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরী অব কংগ্রেস এবং যুক্তরাজ্য, ইতালী, জাপান চীন, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীগুলোতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রফেসর ইসলাম সাংস্কৃতিক, সামাজিক, সমসাময়িক, মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত এবং পারমাণবিক বিজ্ঞান বিষয়ে দৈনিক ও সাপ্তাহিকীতে লিখেন। তাঁর অধীত বিষয়ে ২২৩টি গবেষণামূলক নিবন্ধ এবং প্রায় ৭৫টি পর্যালোচনামূলক ও সাধারণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।প্রফেসর ইসলামের রচিত ইংরেজী গ্রন্থ 'Bedevilled World' নয়াদিল্লী থেকে জুলাই ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থের আরবী রূপান্তর লেবানন থেকে প্রকাশিত হবে। হবে এছাড়া এছাড়া নিউইয়র্কের Nova Science Publishers, Inc. -এর আমইক্ষা প্রকাশিত গ্রন্থের ৫০-পৃষ্ঠার একটি অধ্যায়ের রচয়িতা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী শিক্ষা ও গবেষণামূলক সৃজনশীলতায় প্রতিনিয়ত শ্রমনিষ্ঠ এবং নিমগ্ন রয়েছেন। দেশভ্রমণ, গবেষণা ও সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ইসলাম এপর্যন্ত পৃথিবীর ৩০টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। দেশ বিদেশের কয়েকটি বিজ্ঞান সমিতির সদস্য ছাড়াও তিনি ইতালীর আন্তর্জাতিক তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান কেন্দ্র ICTP-এর একজন সিনিয়র এসোসিয়েট, বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডীন এবং বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। প্রফেসর ইসলাম বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি ও নিউ ইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্সর সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্স ও লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের নির্বাচিত ফেলো।