বাংলা কাব্যের ইতিহাস বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রাচীন ও মধ্যযুগে কাব্যচর্চা ছিল মূলত দৈবনির্ভর। বর্তমানে বুর্জোয়া অর্থনীতির প্রভাবে কাব্যচর্চা হয়ে পড়েছে মানবনির্ভর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। কবি নেহাল হাফিজ ও কবি আয়েশ উদ্দিন ভ‚ঁঞার কবিতায় তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। বাংলা কবিতার মূল উপজীব্য ধর্ম, প্রকৃতিপ্রেম, বিদ্রোহ অনিবার্যভাবেই ছায়া ফেলেছে তাদের মনে ও সৃষ্টিতে। আবহমান বাংলার অপরূপ নিসর্গ, উদার প্রকৃতি, প্রেম-বিরহ নান্দনিক প্রভাব ফেলেছে তাদের কবিতায় ও মন-মানসিকতায়। চিরায়ত সাহিত্য, কল্পনামদির ও নিও-রোমান্টিক ধারার ঠিক মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলা কবিতার এক নতুন যুবরাজ কবি নেহাল হাফিজ। নিজেকে ভেঙেছেন গড়েছেন এরই মধ্যে। কবি নেহাল হাফিজের বাংলা কবিতার রাজ্যে বিচরণ শব্দহীন ও হঠাৎ নয়। প্রায় দুই দশক যাবৎ মালির সুনিপুণ হাতে নিড়িয়ে চলেছেন কাব্যের বাগান। এখন যৌবনে সুগন্ধি ছড়াচ্ছে জুঁই, চামেলি, বকুল, গোলাপ, বেলি হয়ে। তার কবিতার বাচনভঙ্গি সরল, কিন্তু গভীরতায় পূর্ণ। সহজ-সরল ভাষা, অনিন্দ্য শব্দ চয়ন, বিষয়বস্তুর চমৎকারিত্বই হলো কবি নেহাল হাফিজের কবিতার মূল সৌন্দর্য। তার কবিতা পাঠে সচেতন পাঠক খুব সহজেই একজন প্রতিবাদী, সমাজ সচেতন, প্রগতিশীল ও একজন সংবেদনশীল মানবপ্রেমীর উপস্থিতি টের পান। আনন্দ-বেদনা, হতাশা-নৈরাশ্য ও দ্রোহের এক চমৎকার্য মেলবন্ধন ঘটেছে তার কবিতায়। তার চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে এক অমীমাংসিত হিসাব থেকে গেছে। যেমন তিনি লিখেছেনÑ ‘তোমাকে পাইনি, পেয়েছি কবিতা পেয়েছি মাতৃভ‚মি, রক্তের দামে এলো স্বাধীনতা এলে না শুধুই তুমি।’ এখানে যার ত্যাগের মহিমায় স্বাধীনতা এসেছে সেই জননায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক্ষায় কবি এখন দাঁড়িয়ে। প্রেমের কবিতায় তিনি অসাধারণ স্পর্ধা দেখিয়েছেন। প্রেমই সত্য, সত্যই প্রেমÑএটি তার বেলায় শতভাগ সিদ্ধ। কবি নেহাল হাফিজ ও কবি আয়েশ উদ্দিন ভ‚ঁঞার একুশে বইমেলা-২০২০-এ যুগল উপস্থাপনা কাব্যপ্রেমীদের কাছে এক নতুন ব্যঞ্জনা উপহার দিতে সক্ষম হবে বলে আশা করি। কবি আয়েশ উদ্দিন ভ‚ঁঞার দীর্ঘদিন কাব্য সাধনার সাথে সম্পৃক্ত। একজন প্রচারবিমুখ কবি হিসেবে সেই ছাত্রজীবন থেকেই রাঙিয়ে চলেছেন মনের রংতুলি দিয়ে যাপিত জীবনের নানা দিক। কবি প্রায়ই লোকালয় ছেড়ে হাওর-বাঁওড়ের চন্দ্রালোকে গলিত জ্যোৎ¯œায় অবগাহন করে আনন্দ উপভোগ করেন। অসম্ভব সুন্দর তার শব্দ চয়ন ও বিন্যাস। তার কবিতার মূল উপজীব্য প্রেম, প্রকৃতি, স্মৃতি, হতাশা, নৈরাশ্য ও দ্রোহ। তিনি ভালোবাসেন হৃদয়ের ঘাসে টুপটাপ জলপতনের শব্দ। ¯্রষ্টার অপার সৃষ্টিরহস্য তাঁকে প্রতিনিয়ত আন্দোলিত আলোড়িত করে কবিতায়। যুগল কাব্যগ্রন্থের পাÐুলিপি পড়ে আমি অভিভ‚ত হয়েছি এ জন্য যে, এগুলো শুধু অর্থহীন নান্দনিক প্রলাপই নয়, এখানে প্রতিবাদ আছে, ঘৃণা, ক্ষোভ ও বেদনা আছে, আছে সমাজ পরিবর্তন ও জাতিসত্তার উজ্জ্বল পরিচয়। অভিনন্দন ও শুভ কামনা কবি যুগলকে এমন একটি সুন্দর কাব্যগ্রন্থ নিরভিমান পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।
পিতা : মরহুম খোরশেদ আলী তালুকদার মাতা : মরহুম জামিলা খাতুন গ্রাম : চান খাঁ বড়তলী ডাকঘর : তেলিগাতী উপজেলা : আটপাড়া জেলা : নেত্রকোনা বর্তমানে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় বসবাসরত পেশা : কবিতা লেখা জন্ম তারিখ : ০৩ জানুয়ারি ১৯৭৩ খ্রি.। বাবা ছিলেন নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক এবং স্বভাবকবি। ভাইদের একজন দেশবরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ। কবি নেহাল হাফিজের স্ত্রী রোকশানা আক্তার লিপি একজন শিক্ষক। তাদের দুই কন্যা মণীষা সুলতানা (নেলী) ও বিপাশা সুলতানা (নীলা)। স্কুলজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি বিশেষ করে কবিতার নেশা কবিকে পেয়ে বসে। এছাড়াও বড়ভাই কবি হেলাল হাফিজ তাঁর অভিবাবক পিতার প্রতিচ্ছবি ও একমাত্র পথিকৃৎ পাঞ্জেরি। ইতঃপূর্বে কবির তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থÑ ভাগ্যিস! তুমি বেঁচে গেলে সীতা (১৯৯৭), নীল বোতামের কাব্য (২০১৭), নীল নীলিমার নীলে (২০১৮)।