‘অচেনা জনপদ’ বইয়ের গল্পগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। গল্পের শুরু এবং শেষ হঠাৎ করেই হয়। কিন্তু একজন পাঠক গল্প পাঠের মধ্যে যখন থাকেন তখন তিনি চরিত্র ও ঘটনার সাথে একাকার হয়ে যান। চরিত্র ও ঘটনার মধ্যে আটকে রাখার মতো গল্প তেমন একটা পাওয়া যায় না। গল্পকার শুধু যদি গল্প লেখার জন্যই গল্প লেখেন তবে তা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু জীবন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যদি গল্পের বুনন হয় তবে তা পাঠক মনে আঁচ কেটে যায়। বাকী আব্দুল্লাহ পেশায় একজন চিকিৎসক ও মাদক বিরোধী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত। একজন চিকিৎসকে অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে সরাসরি মিশতে হয়। ফলে তার কাছে জমা হয় নানাজনের নানা গল্প। বাংলা সাহিত্যের অনেক বড় বড় লেখক রয়েছেন যারা পেশায় চিকিৎস ছিলেন। বাকী আব্দুল্লাহও সেই পথ ধরে এগিয়ে চলছেন নিরলস। ‘অচেনা জনপদ’ তার একটি উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ অমর একুশে বইমেলাতে। ৮৮ পৃষ্ঠার এই বইটিতে এগারোটি ছোটগল্প স্থান পেয়েছে। এ বইয়ের প্রত্যেকটি গল্পে প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। আমাদের সমাজে ও পরিবারে রয়েছে অনেক মাদকাসক্ত ব্যক্তি। এরা যেমন নিজেদের ক্ষতির কারণ তেমনি পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এই বিষয়গুলোকে গল্পের ছলে লেখক তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। বিশেষ করে কিশোরেরা কীভাবে মাদকাসক্ত হয় বা তাদের কীভাবে এসব থেকে বিরত রাখা যায় তার পথ তিনি ‘অচেনা জনপদ’ এর মধ্যে তুলে ধরেছেন। ‘জন্মদিনের উপহার’ গল্পটিতে ছেলে তার বাবাকে ধূমপানমুক্ত বাবা হিসেবে উপহার চেয়েছে। এটা খুবই একটি ভালো আইডিয়া। সন্তানের চাওয়া পূরণে বাবা তা করতে বাধ্য হয়ে যায়। এ বইয়ের গল্পগুলো পাঠ শেষে একজন পাঠক সচেতন ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে উজ্জীবিত হবেন। বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ করেছেন সাইফ আলি।
বাকী আব্দুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট মাদকবিরোধী সংগঠক। সোসাইটি ফর এন্টি এডিকশন মুভমেন্ট SAAM এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন । মাদকের ভয়াল আগ্রাসন থেকে যুবসমাজকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ও সমাজে মাদকবিরোধী গণসচেতনতার লক্ষ্যে তিনি প্রকাশ করেন উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মাদকবিরোধী পত্রিকা নেশা, যা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় । তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা: আলহাজ্ব মোহাঃ রহমতউল্লাহ ১৯৩৭ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালের গ্রাজুয়েট ছিলেন এবং সারা জীবন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন । মাতা: হাফিজা বেগম ব্রিটিশ আমলে ইডেন স্কুলের ছাত্রী ছিলেন । তাঁর ৪ ভাই ১ বোন । তাঁর স্ত্রী শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী । এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ও মেয়ে ডাক্তার । বাকী আব্দুল্লাহ পেশাগত ও চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ এবং সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য ৩৮টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। যার প্রেক্ষিতে এই অচেনা জনপদ গ্রন্থখানি । এগারোটি ছোট গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে এই গ্ৰন্থ ৷ - প্ৰকাশক