ভূমিকার পরিবর্তে প্রসঙ্গ কথা গতানুগতিক ইতিহাস চর্চার বাইরে আমাদের যাতায়াত অনেকটা কম। অতীতের রাজা-বাদশাদের শাসনামলের ইতিহাসে সেই জনপদের মানুষের হৃৎস্পন্দন খুঁজে পাওয়া যেমন যায় না; তেমনি ঔপনিবেশিক আমলের ইতিহাস চর্চায় পরাধীনতার শৃঙ্খলা ভাঙ্গার রক্তভেজা পর্বটুকু থাকে অনুপস্থিত। সামান্য নোট বই ভিত্তিক পাঠ্যবই- এর ইতিহাসে আবার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সকল কথা খোলাসা করা হয় না। বিশেষত বৈপ্লবিক আন্দোলন সংগ্রাম এবং স্বদেশীদের আত্মত্যাগ উপেক্ষিত থাকে। কেবল টেবিল ওয়ার্ক করে যারা ইতিহাসের ধারা খুঁজেন- তাদের চোখে প্রান্তীয় সমাজের প্রতিরোধ বা বিভিন্ন অঞ্চলের সংগ্রামী জনতার রক্তস্নাত ঘটনা হয়ে যায় 'কিচ্ছা'র বিবরণ। অথচ সত্য উদঘাটন করার বিষয় থাকে অনুজ্জ্বল। এই উপেক্ষিত অধ্যায় হচ্ছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে চরমপন্থি পর্ব বা সশস্ত্র সংগ্রাম। বিগত বিশ শতকের শুরু থেকে ত্রিশের দশক পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান চেয়ে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে। তারা মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়। প্রায় শত বছরের ব্যবধানে তারা ইতিহাসে উপেক্ষিত ও অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই চেতনায় বিশ্বাসী একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ অর্জুন (১৮৯৯-১৯৯০)। সেই উত্তপ্ত সময়ের অগ্নিঝরা ঘটনাবলীকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন তাঁর 'অগ্নিযুগের ইতিকথা' গ্রন্থে। তিনি কোনো ইতিহাসবিদ ছিলেন না। অথচ তাঁর জানা ও দেখা মাতৃভূমির জন্য রক্তপথে আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনাকে ইতিহাসের উজ্জ্বল মোহনা তুলে দিয়েছেন তিনি। মোটামুটিভাবে বলা যায়, তাঁর কৈশোর ও যৌবনকালে সংঘটিত সকল বিপ্লববাদী ঘটনার তিনি ছিলেন নীরব সাক্ষী ও সমর্থক। ফলে 'অগ্নিযুগের ইতিকথা' হয়ে ওঠেছে মন্ত্রগুপ্তি যুগের ধারাবাহিক ইতিহাসের পরম্পরাগাথা এক স্বদেশ চেতনার দীপ্ত ত্যাগী দলিল। এই ধরনের বই সাধারণত আমাদের দেশে প্রকাশিত হয় না। অজ্ঞাত কারণে এই বিষয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা নিতান্ত কম।