মরণের পরে কি হবে? আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি জীবকে অযথা সৃষ্টি করেননি এবং তাদেরকে দায়িত্বহীনভাবে ছেড়ে দেননি; বরং তিনি তাদের উপর এক মহান দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন। যে দায়িত্ব পেশ করা হয়েছিল আকাশ-যমিনের কাছে, কিন্তু আকাশ-মিন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। অথচ মানুষ অত্যন্ত দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। অধিকাংশ মানুষই এ মহান দায়িত্ব পালন না করে গাফেল হয়ে জীবন যাপন করছে। তাদের স্রষ্টার পরিচয় সম্পর্কে এবং তাদেরকে এ পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করছেন। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে তাদের অবস্থান এবং দীর্ঘস্থায়ী আখিরাতের দিকে দ্রুত প্রস্থান সম্পর্কে তাদের কোন চিন্তা-ভাবনা নেই। মানুষ এ পৃথিবীতে স্বল্প সময় অবস্থান করলেও তার যাত্রা সীমাহীন। ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই পার্থিব জীবনের বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। কিন্তু চিরস্থায়ী জীবন তথা পরকালীন জীবন ও তার বিষয়াদি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। তাই বলে পরজগতের ব্যাপারে এবং আত্মার যাত্রা সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ শেষ হয়ে যায়নি। আখিরাত সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই মানুষ আল্লাহর পথ থেকে অনেক দুরে। দুনিয়ার কোন সম্পদ দেখতে পেলে সেদিকেই দ্রুত অগ্রসর হয় এবং পরকালের নিয়ামত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর একে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তারা কেবলমাত্র পার্থিব জীবনের প্রকাশ্য বিষয়সমূহ সম্পর্কেই অবগত আছে এবং তারা পরকালের কোন বিষয় সম্পর্কে খবরই রাখেনা। (সূরা রূম ৭) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেছেনঃ “তােমরা তাদের মতাে হয়াে না যারা আল্লাহ্ তা'আলাকে ভুলে গেছে। ফলে তিনি তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। মূলত তারাই অবাধ্য"। -(সূরা হাশর ও ১৯) যখন অধিকাংশ মানুষের অবস্থা এরকমই ছিল তখন এমন বিষয়সমূহের অনুসন্ধান ও আলােচনা করা হলো যা অন্তরে ভয়ের সঞ্চার ও চোখে অশ্র প্রবাহিত করবে এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। এ লক্ষ্যে আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সা.) ওয়া সুন্নাত এবং অতীত জাতির অবস্থা ও তাদের উপদেশ সমূহের উপর গভীরভাবে দৃষ্টি দিয়ে কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ে তুলে ধরতে সচেষ্ট হলাম। এ বিষয়গুলাে সামনে রেখেই আলােচ্য গ্রন্থটি পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল যা প্রত্যেকের জন্য জীবন চলার পাথেয় হয়ে থাকবে এবং পরকালে সকলের জন্য আমলে বা সকর্ম হিসাবে পরিগণিত হবে। আলােচ্য গ্রন্থে সম্পাদনাকালে কুরআন ও সুন্নাহর পাশাপাশি এ লক্ষ্যে নির্ভরযােগ্য আলেমদের কিতাব থেকেও কিছু উক্তি সংগ্রহ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে আবেদন তিনি যেন এর মাধ্যমে পাঠকদের হিদায়াত দান পরকালে পরিত্রাণের পথ প্রশস্ত করেন।
মাওলানা আশেক এলাহী বুলন্দশহরী (রহ.) ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন আলেম, প্রখ্যাত মুফাসসির, হাদীস ও ফিকহ বিশারদ এবং একজন সুফি লেখক। তাঁর জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বুলন্দশহর জেলায়। বুলন্দশহর থেকেই তাঁর নামের শেষে "বুলন্দশহরী" যুক্ত হয়েছে। তিনি বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচি শহরে হিজরত করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন জামিয়া উলুম ইসলামিয়া, বানুরি টাউন-এ শিক্ষকতা করেন এবং বহু ছাত্রকে আলোকিত করেন। মাওলানা আশেক এলাহী (রহ.) তাঁর সুগভীর জ্ঞান, প্রাঞ্জল ভাষা ও সহজবোধ্য উপস্থাপনায় ইসলামী জ্ঞানভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মূলত হাদীস, তাফসীর, ফিকহ ও আত্মশুদ্ধিমূলক বিষয়ের ওপর বিশুদ্ধ আকীদাভিত্তিক বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন।