‘উম্মাহাতুল মুমিনীন; নবীজির পূত-পবিত্র স্ত্রীগণ । মুসলিম জাতির মা। যারা আসমানী জ্ঞানে সমৃদ্ধ ও উত্তম চরিত্রের পূর্ণতায় দ্যুতিময় হয়েছেন নবীজির নিবিড় পরিচর্যা ও প্রেমময় যত্নশীলতায়। আল্লাহ... See more
‘উম্মাহাতুল মুমিনীন; নবীজির পূত-পবিত্র স্ত্রীগণ । মুসলিম জাতির মা। যারা আসমানী জ্ঞানে সমৃদ্ধ ও উত্তম চরিত্রের পূর্ণতায় দ্যুতিময় হয়েছেন নবীজির নিবিড় পরিচর্যা ও প্রেমময় যত্নশীলতায়। আল্লাহর প্রেরিত নবীর একান্ত সান্নিধ্যে পরিশুদ্ধির স্নিগ্ধ জোছনায় স্নাত হয়ে সমগ্র নারী জাতির জন্য হয়েছেন অনন্য; উপমেয়। বহুমুখী কর্মমুখরতায় নবীজি সারা দিনমান ব্যস্ত থাকতেন । কিন্তু দিনশেষে ঠিকই স্ত্রীদের কাছে ফিরে এসে দীপ্যমান করতেন একজন আদর্শ স্বামীর পরিচয়। আজকের মতো সুখের বিচিত্র উপকরণের পসরা ছিল না নবীজির ঘরে। কিন্তু শ্রদ্ধাশীলতা, মমতা ও ভালোবাসার আবেশে তাদের খেজুর পাতার কুটির ছিল জান্নাতের মুগ্ধকর মোহনীয়তায় মোড়ানো। স্ত্রীরা নবীজির সমগ্র জীবনের অংশী হয়ে তার পাশে থেকেছেন সুখে-দুঃখে, আনন্দ ও উচ্ছলতায়।’ এই মহীয়সী নারীদের দীপ্তিময় জীবনী না পড়লে নবীজীবনের বিশাল একটি অংশ আমাদের কাছে অধরাই থেকে যাবে। জানতে পারব না তাদের পারিবারিক জীবনের খুঁটিনাটি; খুনশুটি। এই নবী সহধর্মিণীদের মোহন জীবন কাগজের পাতায় তুলে আনতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছে দ্বীন পাবলিকেশন।
বই রিভিউ উম্মু সালামা রা. রাসূলুল্লাহ স. এর স্ত্রী। ওনার জীবন থেকে রাসূল সা. এর সাথে কাটানো নববী জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার সুযোগ হলো। বর্তমান নারী সমাজ ওনার জীবনী অধ্যয়ন করলে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হতে পারবে।
উম্মু সালামা রা. ইসলামের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মদিনা ও হাবশায় হিজরত করেছেন। এছাড়া মক্কার কাফেররা যখন রসূল স. ও তার সাহাবীদের হজ্জ্ব করতে মক্কায় প্রবেশ করতে দেয়নি বরং তাদের এহেন আচরণের কারণে হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি করেন তখন ওমর রা. সহ সকল সাহাবী অখুশি হয়। সাহাবীদের মাথা মুন্ডল এবং পশু কুরবানী করতে বললে সে আদেশ কানে তোলেনি। এহেন নাজুক সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে তিনি বুদ্ধিমতি স্ত্রীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয়ে স্বামীকে পরামর্শ দিয়ে সাহাবীদের সাথে মেলবন্ধন তৈরী করে দেন।
এ ঘটনা থেকে বর্তমানে যেসকল স্ত্রীরা স্বামীর কল্যাণপ্রার্থী তারা উম্মাহাতুল মুমিনীনের এ ঘটনা থেকে সঠিক সময়ে স্বামীকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করতে ব্রত হলে পারিবারিক সুখ শান্তি ফিরে আসবে। স্বামী -স্ত্রী একে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়বে, মহব্বত তৈরী হবে।
উম্মু সালামা রা. কুরআন নিয়ে ভাবতেন। নারীদের জন্য কেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে কোনো ওহী নাযিল করেননি এ বিষয়টা ওনাকে ভাবাতো। তিনি স্বামীকে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে নারীদের নিয়ে আয়াত নাযিল করেন। বর্তমান নারী- পুরুষ উভয়ে যদি রামাদানের এ সময়ে কুরআন নিয়ে গভীর ভাবনা চিন্তা করতো তবে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের জীবন বারাকাহ দিতেন।
রাসূল সা. এর সাথে দীর্ঘ ৬বছর স্থায়ী হয় ওনার সংসার জীবন। এসময়ে তিনি উম্মাহর নারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব পেতেন রাসূল সা. থেকে। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন উম্মাহর নারীরা ফিকহী বিষয়ে ওনার থেকে উপকৃত হয়েছে। এখনকার দিনের নারীরা জন্য উম্মাহর কল্যাণে তার ন্যায় নিবেদিত প্রাণ হতে চায় তবে তাদের উচিত এ মহিয়সী নারীর মতো স্বামীর নিকট থেকে ইসলামের গভীর জ্ঞান অর্জন করে উম্মাহর খেদমত করা। সমাজ থেকে অজ্ঞতা দূর করতে সচেষ্ট হওয়া।
মুয়াবিয়া রা. এর কাছে যখন কিছু মুসলিম বাইয়াত দিতে অনাগ্রহী ছিলো তখন তিনি তার পরিবারের কয়েকজনকে উদাহরণ হিসেবে টেনে অপর মুসলিমদের উৎসাহিত করেন যাতে তারা ওনাকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়। উম্মাহর মধ্যে যে অটুট বন্ধন থাকে সে বিষয়টাতে তিনি সতর্ক ছিলেন, আন্তরিক ছিলেন। ওনার এমন কর্ম দূরদর্শিতা থেকে আমাদেরও অনেককিছু শেখার আছে।
অনুবাদের মান: জুবায়ের রশিদ ভাইয়ের বর্ণনায় অলংকার আছে। সহজ শব্দ নির্বাচনের পাশাপাশি তিনি সুন্দর উপমার সংযোজন করে বর্ণনাশৈলী উপভোগ্য করে তুলেছেন। আশাকরি এমন কর্ম দক্ষতা তিনি ধরে রাখবেন যাতে আমরা ওনার সৃজনশীল কাজ থেকে উপকৃত হতে পারি।