আবিদ আনোয়ার স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে শ্রেষ্ঠতম নাম। কবিতা বিষয়ে এমনসব বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে তাঁর যেগুলো প্রচলিত অধ্যাপকসুলভ আলোচনার বাইরে গিয়ে নতুন ভাবনায় উদ্রেক করে। ছড়া ও গান রচনায় তিনি আমাদের শ্রেষ্ঠদের একজন। কথাসাহিত্য রচনায়ও হাত দিয়েছেন অল্প হলেও। এই বইতে সংকলিত হয়েছে আবিদ আনোয়ার-এর রচনাকর্ম নিয়ে দুই বাংলার বিশিষ্টজনদের মূল্যায়নধর্মী অনেক লেখা যা কেবল আবিদ আনোয়ারকে চিনতেই সহায়ক হবে না, শিল্পসাহিত্যের নানা অলিগলিরও সন্ধান মিলবে। আমাদের সাহিত্যজগতের ‘দিকপাল’ বলে পরিচিত প্রায় সবাই, যেমন শওকত ওসমান, সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ড. হুমায়ন আজাদ আবিদ আনোয়ার-এর রচনাকর্মের উৎকর্ষ নিয়ে অকুণ্ঠচিত্তে লিখেছেন তাঁদের মূল্যায়নধর্মী নানা রচনায়; শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন সাক্ষাতকার ও সেমিনারের বক্তৃতায়। এই বইয়ের সম্পাদক তপন বাগচী আবিদ আনোয়ার-এর একনিষ্ট অকৃত্রিম সুহৃদ যিনি বলতে গেলে তাঁর সকল রচনাকর্ম সম্পর্কেই অবহিত কারণ যখনই আবিদ আনোয়ার-এর কোনো বই বেরিয়েছে তখনই তিনি এর আলোচনা লিখেছেন নানান পত্র-পত্রিকায়। এগুলো এখন তাঁর সম্পাদকীয় নিবন্ধগুচ্ছ হিসেবে মুদ্রিত হলো। মুগ্ধচিত্তে আবিদ আনোয়ারেএর রচনাকর্ম নিয়ে আরো লিখেছেন ড. মাহবুব সাদিক, অসীম সাহা, ড. রফিকউল্লাহ খান, শেখর ইমতিয়াজ, আনিসুল হক, ড. মাসুদুল হক, রহিমা আখতার কল্পনা, শাকিল রিয়াজ, তারেক রেজা, সুমন সরদার, মোহাম্মদ নূরুল হক, সেলিনা আহমেদ, দুলাল বিশ্বাসসহ সব প্রজন্মের মেধাবী লেখক-আলোচকদের অনেকেই। এগুলোর সবই বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই সংকলের জন্য আবিদ আনোয়ার-এর রচনাকর্ম নিয়ে নতুন করে লিখেছেন: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ড. শ্যামল কান্তি দত্ত, শ্যামসুন্দর সিকদার, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, মনি হায়দার, অণিমা ও বাসুদেব মণ্ডল। শিল্পসাহিত্য বিষয়ে নন্দনতাত্ত্বিক বিশ্বাসের জায়গাটি আবিদ আনোয়ার ও তপন বাগচী দু’জনেরই রচনাকর্মের উৎকর্ষকে জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে এই সংকলন প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন তিনি এমন বিশ্বাসে যে, দশকের গণ্ডি পেরিয়ে আবিদ আনোয়ার-এর রচনাকর্ম বাংলাসাহিত্যের আবহমান ভাণ্ডারে জমা গয়ে থাকবে-মহাকাল তাঁকে বিমুখ করবে না-কারণ দীর্ঘস্থায়ী আবেদন সৃষ্টির সকল উপাদানই আবিদ আনোয়ার-এর রচনাকর্মে বিদ্যমান....
তপন বাগচী জন্ম: ২৩ অক্টোবর ১৯৬৮; কদমবাড়ি (মাতুলালয়) মাদারীপুর; পিতা তুষ্টচরণ বাগচী; মাতা জ্যোতির্ময়ী বাগচী। শিক্ষা: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ও ফোকলোর বিষয়ে পিএইচডি । তিনি কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, যোগাযোগবিদ ও ফোকলোরবিদ।। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: কেতকীর প্রতি পক্ষপাত (১৯৯৬)-সহ ৭টি কবিতাগ্রন্থ, বুকের ভেতর বসত করে (২০১৪)-সহ ৫টি গীতিকবিতাগ্রন্থ; চরকাবুড়ি ওড়ায় ঘুড়ি (২০১২)-সহ ১৭টি ছড়াগ্রন্থ ও সাতদিনের সাতকাহন-সহ ৫টি কিশোর গল্পগ্রন্থ; সাহিত্যের এদিক সেদিক (২০১৩), রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ আখ্যান (২০১২), লালন মতুয়া লোকসংগীত সন্ধান (২০১২), যাত্রাগান: জনমাধ্যম ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত (২০০৭), মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ (২০০৭), রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ: চন্দ্রাহত অভিমান (২০০২)-সহ ৪০টি প্রবন্ধ গ্রন্থ। পুরস্কার ও স্বীকৃতি:: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (ফোকলোর, ২০২৩), স্টান্ডার্ড চার্টার্ড দ্য ডেইলি স্টার সেলিব্রটিং লাইফ লিরিক অ্যাওয়ার্ড (গান, ৪বার), সাংস্কৃতিক খবর পদক (কবিতা, কলকাতা, ২০১৩), মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক (প্রবন্ধ, ২০১২), অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতি পদক (গবেষণা, ২০০৮), জসীমউদদীন গবেষণা পুরস্কার (প্রবন্ধ, ১৯৯৬), মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার (প্রবন্ধ, ১৯৯১)-সহ ছত্রিশটি পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেন। পেশা: পরিচালক, ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগ, বাংলা একাডেমি ।