বাংলাদেশের এক ভীষণ পরিচিত মুখ সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি কেন এতটা পরিচিত? কিছুটা তার কাটখোট্টা কথাবার্তা কিংবা মতবাদ তার সঙ্গে তো এক বিচিত্রধর্মী সেলাইবিহীন সাদা দুখণ্ড কাপড় পরিধানের জন্য! ১৯৪৬ সালে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা এই মুক্তিবুদ্ধির ধারক নিজেকে সাংবাদিক,কলামিস্ট,কবি,লেখক,গবেষক,প্রাবন্ধিক,প্র তিবাদী,সমাজ সংস্কারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।বইটি মূলত সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়।
২০০৪ সালে প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ এর উপর আক্রমণের প্রতিবাদে সৈয়দ আবুল মকসুদ এর লেখা এবং প্রথম আলোতে প্রকাশিত 'হুমায়ুন আজাদের ওপর আঘাত-ফ্যাসিবাদের নগ্নরূপ' শিরোনামে প্রকাশিত কলামকে কেন্দ্র করে সংগঠিত ঘটনাবলি নিয়ে রচিত।ঘটনার দিন একটি অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদিতে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। হৃদয়বিদারক এই ঘটনা শোনার পরে,ঘুম চলে যায় চোখ দিয়ে।দীর্ঘকালের পরিচয় তার সঙ্গে হুমায়ুন আজাদের।তার চেয়েও বড় কথা,বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিও বটে তিনি!তার উপর এমন নগ্ন হামলার প্রতিবাদের প্রথম আলোতে তার একটি কলাম ছাপা হয়।যার জন্য বাসস কর্তৃক তার জবাবদিহিতা চাওয়া হয়।দুদিন সময় নিয়ে তিনি সরকারি চাকরিই ছেড়ে দেন,তবুও থেকেছেন নিজের বক্তব্যে অটল।
বইটিতে রাজু আহমেদ(লেখক) এর সঙ্গে তার নিজস্ব বাসায় আলোচনায় শুধু এই একটি বিষয়ই নয়,উঠে এসেছিলো বাংলাদেশের নানান গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে কথাবার্তা। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সোভিয়েত,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্থান পেয়েছিলে সেখানে।
প্রিয় বাক্যঃ
° জীবিকার জন্য মাথা বিক্রি করার চেয়ে তরি-তরকারি বিক্রি করা অনেক শ্রেয়।(পৃঃ১৯)
°প্রগতিশীলতা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়,সমাজে চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে।(পৃঃ২০)
-পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সৈয়দ আবুল মকসুদ সম্পর্কে,তার জীবনী কিংবা তার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গতিপথ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে বইটির বিকল্প নেই।মহৎ মানুষের চিন্তাভাবনাও মহৎ হয়ে থাকে।
রাজু আহমেদ ১৯৭৮ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার খেতেরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মজিবুর রহমান এবং মা নূরজাহান বেগমের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ২০০৫ সালে তিনি অন্তরা আহমেদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর অনন্ত আহমেদ ও অরণ্য আহমেদ নামে দুই ছেলে রয়েছে। ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন রাজু আহমেদ। এইচএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে । এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথমে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, সাপ্তাহিক ২০০০ এবং পাক্ষিক ক্রীড়া জগৎ পত্রিকায় প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে দৈনিক আজকের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালে গাজী টেলিভিশনে সিনিয়র রিপোর্টার পদে যোগ দেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে পদোন্নতির পাশাপাশি প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজু আহমেদ সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কাজে নিয়োজিত আছেন। তাঁর কয়েকটি গবেষণাপত্র নিয়ে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও দারিদ্র্য বিমোচন’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টার হিসেবে তিনি ২০০৬ সালে প্যানোস সাউথ এশিয়া ফেলোশিপ, ২০০৭ সালে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড, ২০০৮ সালে এফপিএবি সাংবাদিকতা পুরস্কার, ২০১১ ও ২০১৮ সালে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের ‘বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’, ২০১১ সালে ইউএনএফপিএ-ডিজিএফপি জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ ও ২০১৩ সালে সিএসএফ-ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে ডিআরইউ-গ্রামীণফোন বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডে আইএএস স্কলারশিপ, অ্যাকশনএইড-ইআরএফ ফেলোশিপ ২০১৮ এবং পরিবার পরিকেল্পনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ লাভ করেন।