গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত কচি-কাঁচা একাডেমি ৩০ বছর অতিক্রম করে ২০১৯ সালে। ৩০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আয়োজন করা হয় মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ‘চোখ মেলো চাঁদের দেশে’, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ‘কেমন স্কুল চাই’ শিরোনামে রচনা প্রতিযোগিতা। ‘কেমন স্কুল চাই’ শিরোনামে রচনা প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের ৮০ জন রচনা জমা দেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রচনাগুলো মূল্যায়ন করেন লেখক-গবেষক রাখাল রাহা, সংস্কৃতিজন লিয়াকত চৌধুরী এবং অধ্যাপক অসীম বিভাকর। তাঁদের সুচিন্তিত বিবেচনায় কচি-কাঁচা একাডেমির ৩০ বছর পূর্তি উৎসবে তিন গ্রæপের ৯ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রত্যেক গ্রæপের প্রথম স্থান অধিকারীকে পাঁচ হাজার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে তিন হাজার এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীকে দুই হাজার টাকার বই, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়। রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বাছাই করে ৩২টি রচনা সংকলন করে ‘স্বপ্নের স্কুল’ বইটির আত্মপ্রকাশ। পুরস্কার পেয়েও যেমন অনেকের রচনা এখানে স্থান পায়নি তেমনি পুরস্কৃত না হয়েও অনেকের লেখা এই বইতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বয়সের চিন্তাশীল কিছু ব্যক্তি যারা নিজেরাই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক হিসেবে তাদের স্বপ্নের স্কুলের যে চিত্র এঁকেছেন তারই এক প্রামাণ্য দলিল এই বই। বইটির ভূমিকায় সম্পাদক বলেন- ‘ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কারখানা কেমন হওয়া দরকার এ বিষয়ে শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবা-প্রবীণদের এসব প্রস্তাব যদি রাষ্ট্র কোনোদিন আমলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে এই বইটি হয়তো একটি সূত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।’ ভূমিকাসহ বইটির সূচিপত্রে রয়েছে- ক বিভাগে : দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি, খ বিভাগে : নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ও গ বিভাগে রয়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের লেখা। ক বিভাগে অংশ নিয়েছিল দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৫ জনের লেখা ছাপা হয়েছে। লেখার নিচে তাদের নাম-পরিচয় দেওয়া হয়েছে। খ বিভাগে অংশ নিয়েছিল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৩৯ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নির্বাচিত ২০ জনের লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিভাগের জন্য শব্দসীমা ছিল ১২০০। এবং গ বিভাগে লিখেছেন শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। গ বিভাগ নির্ধারণ করা হয়েছিল- স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। এ বিভাগে শুধু একজনের রচনা পাওয়ায় গ ও ঘ বিভাগকে একত্রিত করে গ বিভাগ করা হয়। প্রতিযোগিতার নিয়মানুসারে রচনা হিসেবে তাঁর লেখা বিবেচনাযোগ্য না হলেও এই বইতে সেটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। বইটির সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। বইটির প্রতিটি লেখাই সুসম্পাদিত ও মননশীল। ছাত্র অভিবাকদের চোখে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এরকম একটি কাজ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হোক।
প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক, যিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিশু উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। জীবনী ও কর্মজীবন ১৯৯০ সালে তিনি গাজীপুরে “কচি-কাঁচা একাডেমি” প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিশুদের জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবমুখী, মননশীল ও শিশুপোযোগী শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে । ২০১৫ সালে তিনি “ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন, যা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে আসছে । তিনি “নয়নপুর এন এস আদর্শ বিদ্যালয়” নামক আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে । ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ৪ মার্চ হৃদযন্ত্রের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন । তিনি স্ত্রী খালেদা সিদ্দিকী, একমাত্র কন্যা মাটি সিদ্দিকী এবং চার ভাইবোন রেখে গেছেন। উত্তরাধিকার তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহ আজও সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকীর অবদান ও স্মৃতি বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিশু উন্নয়নের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।