মামলুক সালতানাতের প্রথম নারী শাসক 'সাজারাতুদ দুর'- বই পরিচিতি
৬৪৬ হিজরি—১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দ। চলছে সপ্তম ক্রুসেড। ফ্রেঞ্চ সম্রাট নবম লুইস উঠেপড়ে লেগেছেন মুসলিম সালতানাতের বিরুদ্ধে। আইয়ুবি সালতানাতের সম্রাট আল-মালিকুস সালিহ নাজমুদ্দিন আইয়ুব সুলতান সালাহুদ্দিনের ঐতিহ্য ধরে রেখে ক্রুসেডারদের সমুচিত জবাব দিচ্ছেন। মনসুরায় নবম লুইসকে বন্দি করে তাঁর সৈন্যরা। কিছুদিন আগে সুলতান একজন তুর্কি বাঁদিকে বিয়ে করেছেন; নাম তার—শাজারাতুদ দুর। জ্ঞানে-গুণে ও বুদ্ধিমত্তায় যিনি বাঁদি থেকে সুলতানের স্ত্রীর মর্যাদায় আসীন হয়েছেন।
৬৪৭ হিজরি—১২৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। চতুর্দিকে ক্রুসেডাররা মুসলিম অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবছে। আইয়ুবি সালতানাতের স্থিতিশীলতায়ও কিছুটা ভাটা পড়েছে। এমন বিক্ষিপ্ত সময়ে মারা গেলেন সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুব। সুলতানের মৃত্যুসংবাদকে গোপন করে হাল ধরলেন শাজারাতুদ দুর—মুসলিম সাম্রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী সম্রাট। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শাজারাতুদ দুর গোপন রাখলেন সম্রাটের মৃত্যুসংবাদ। অবশেষে ঘোষণা দিয়ে আসীন হলেন মসনদে। কিন্তু; মুসলিম সালতানাতের সম্রাট একজন নারী? নববী মানহাজের সম্পূর্ণ বিপরীত এই ধারার বিরুদ্ধে দৃপ্তকণ্ঠে দাঁড়ালেন শাইখুল ইসলাম ইযযুদ্দিন ইবনে আব্দুস সালাম রহ.। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল মুসলিম সালতানাত। শাজারাতুদ দুর বাধ্য হলেন শরয়ি সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাঁড়াতে। তবে, অবলম্বন করলেন কৌশলী এক পথ। বিয়ে করলেন মামলুক সেনাপতি ইযযুদ্দিন আইবেককে।
শাজারাতুদ দুরের হাত ধরে সূচিত হয় ইতিহাসের এক পটপরিবর্তনের। আইয়ুবি সালতানাত থেকে সূচনা ঘটে মামলুক সালতানাতের। আড়াল থেকে অবদান রাখতে থাকেন শাজারাতুদ দুর। এককভাবে মাত্র তিন মাস শাসন পরিচালনা করলেও জীবনের পুরো সময় তিনি আড়াল থেকে শাসনকার্যকে প্রভাবিত করে গেছেন। নুরুদ্দিন খলিলের এই বইটিতে উঠে এসেছে শাজারাতুদ দুরের জীবনী, আইয়ুবি সাম্রাজ্যের শেষ দিকের ইতিহাস, তৎকালীন ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, শাজারাতুদ দুরের অনস্বীকার্য অবদান, ইসলামে নারী নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি, আইয়ুবি সালতানাত থেকে মামলুক সালতানাতে রূপান্তরের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন, শাজারাতুদ দুরের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দক্ষতা, তার বিষাক্ত রূপ; সবশেষে তাঁর করুণ পরিণতি ও মৃত্যুর বিবরণ। সংক্ষিপ্ত কলেবরের এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আছে ইংরেজ ক্রুসেড ঐতিহাসিকদের সম্পর্কে লেখকের কিছু বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন।
• ইসলামের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বইয়ের শেষে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বিস্তর আলোচনা করেছেন।
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই বইটি সংগ্রহ করা। ভূমিকা থেকে জানতে পারলাম বইটি লেখা হয়েছে ২০০৪ সালে। কিন্তু লেখকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। অনুবাদক ও প্রকাশকের কথাও বইয়ে পেলাম না। বইটা থেকে পাঠক জানতে পারবে ক্রুসেড যুদ্ধের শেষ সময়ের ঘটনাবলি যখন আইয়ুবি সালতানাতের শেষ সুলতানের সামনে ক্রুসেডার সেন্ট লুইস (১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দ)। মুসলিম বিশ্বের এই সংকটময় মূহুর্তে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে শাজারাতুদ দূর। এছাড়াও এই বইতে পাওয়া যাবে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী পরবর্তী আইয়ুবি সালতানাতের অন্যান্য শাসকদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বইয়ের ৮৯-১১৪ নং পৃষ্ঠাগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। পুরো বইটা পড়ে মনে হয়েছে ভাষা সম্পাদনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় না নিয়েই বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। বেশ কিছু বানান ভুলও চোখে পড়েছে। বইয়ের শেষ অধ্যায়ে দেশ পরিচালনায় ইসলামে নারী নেতৃত্বের বিধান সম্পর্কিত আলোচনাটা বেশ তথ্যসমৃদ্ধ মনে হয়েছে। এই অংশ রচনা করেছেন শাইখ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে সুলতানা রাজিয়াকে নিয়ে কোন আলোচনা থাকলে আরো ভাল হতো।
Read More
Was this review helpful to you?
By Md Moshiour Rahman Maidul ,
17 Apr 2023
Verified Purchase
বইটি খারাপ নাহ.... কিন্তু ভেবেছিলাম সম্পূর্ন বইটি শাজারাতুদ দুর-কে নিয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম তার সমসাময়িক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে বইয়ের প্রথম অর্ধেকে। বইয়ের মাঝে ছোট্ট দুইটি অধ্যায় শাজারাতুদ দুর-কে নিয়ে। তারপর নারী শাসন নিয়ে। এগুলো সব ঠিক আছে, কিন্তু আমি বইটি কিনি প্রথম নারী শাসক সম্পর্কে জানতে, নাকি পাশাপাশি এত কিছু। তা ছাড়া শাজারাতুদ দুর-কে নিয়ে আরো বিষদ বর্ণনা করা প্রয়োজন ছিল যা খুবই সামান্য। তাই আমার মতে বইয়ের নামকরণ অনুচিত হয়েছে। যারা আমার মত "প্রথম নারী শাসক শাজারাতুদ দুর" এই নাম দেখে বইটি কিনবেন তাদের হতাশ হতে হবে।