গ্রন্থটিতে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে প্রচার মাধ্যম বা মিডিয়ায় বাকস্বাধীনতার ছদ্মাবরণে ইসলামোফোবিয়ার অসারতা ব্যাখ্যাসহ ভ্রান্তি অপনোদনের প্রচেষ্টা চালনা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে ফেসবুক পোস্টদাতা বা ব্লগারদের পরিচিতি/বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বাংলাভাষী তথাকথিত কিছু ‘স্বঘোষিত নাস্তিক, মানবতাবাদী ও মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী’র সাইটে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসহীনতা, ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষের মহোৎসবের কিছু নমুনা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে লেখা বুদ্ধিবৃত্তিক না হয়ে অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত হয়, তা তৃতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে। ‘স্বঘোষিত মুক্তমনা’দের আসল লক্ষ্য হচ্ছে ধর্ম বিশ্বাস। তারা এমন কথাও বলেছে, নিউটনের মতো শ্রেষ্ঠ মেধাবী বিজ্ঞানীও ধর্ম ও স্রষ্টায় প্রবল বিশ্বাস থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন নি। বিগ ব্যাং থিওরি, পৃথিবী সৃষ্টি, ডারউনিজম প্রভৃতির প্রসংগ তুলে ইসলামের অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে তাদের এসব বিতর্কিত মতবাদের বিপরীতে ইসলামের শাশ্বত রূপ এবং মানব উপকারী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বৈজ্ঞানিক ইশারা কুরআনে রয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাকে ইসলাম ধর্মীয় মর্যাদা দান করেছে। ভ্রান্ত অভিযোগের উত্তরে ব্যাখ্যা সহকারে ‘স্বঘোষিত মুক্তমনা’দের ভ্রান্তির অপনোদনের চেষ্টা করা হয়েছে। ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর, পশ্চিমারা ইসলামী অনুভূতির বিরুদ্ধে তাদের জঘন্য কর্মকান্ডকে বৈধতা দেয়ার সুযোগ নেয় যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ইসলামোফোবিয়াকে উত্থাপিত করে। চতুর্থ অধ্যায়ে বিশ্বে ইসলামভীতিজনিত গোঁড়ামী ও সহিংসতা সাধারণত শিকড়হীন ভয়, বৈরিতা, এবং গোটা বিশ্বে মুসলিম ও ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কুসংস্কার এবং স্টেরিওটাইপিং হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ইসলাম তথা মুসলমানেরা প্রকট ধর্মীয় বিভাজনের প্রধানতম শিকার। নানা বর্ণে, নানা মোড়কে, নানা আকারে বহুমাত্রিকতায় তাদেরকে এর শিকার হতে হচ্ছে। স্মরণীয় মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দেয়া সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তি মুসলিম ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করেছে। ফলে এ অঞ্চলের শত-সহস্র মানুষ প্রাণ হারায় এবং বিশ্বের বহু মুসলিম দেশে চিরস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে।
প্রফেসর ড. এ.কে.এম. আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালে বগুড়ায়। প্রফেসর আজহার ১৯৭২ সালে লন্ডন থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় এবং গবেষণা কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে Professor Emeritus - তিনি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসাবে ১১ বছর কর্মরত ছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১৬টি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিত্ব ১৫টি সৃজনশীল গ্রন্থের ও অধ্যায়ের প্রণেতা। এই লেখকের সম্পাদিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কার্যবিবরণী যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরী অব কংগ্রেস এবং যুক্তরাজ্য, ইতালী, জাপান চীন, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীগুলোতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রফেসর ইসলাম সাংস্কৃতিক, সামাজিক, সমসাময়িক, মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত এবং পারমাণবিক বিজ্ঞান বিষয়ে দৈনিক ও সাপ্তাহিকীতে লিখেন। তাঁর অধীত বিষয়ে ২২৩টি গবেষণামূলক নিবন্ধ এবং প্রায় ৭৫টি পর্যালোচনামূলক ও সাধারণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।প্রফেসর ইসলামের রচিত ইংরেজী গ্রন্থ 'Bedevilled World' নয়াদিল্লী থেকে জুলাই ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থের আরবী রূপান্তর লেবানন থেকে প্রকাশিত হবে। হবে এছাড়া এছাড়া নিউইয়র্কের Nova Science Publishers, Inc. -এর আমইক্ষা প্রকাশিত গ্রন্থের ৫০-পৃষ্ঠার একটি অধ্যায়ের রচয়িতা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী শিক্ষা ও গবেষণামূলক সৃজনশীলতায় প্রতিনিয়ত শ্রমনিষ্ঠ এবং নিমগ্ন রয়েছেন। দেশভ্রমণ, গবেষণা ও সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ইসলাম এপর্যন্ত পৃথিবীর ৩০টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। দেশ বিদেশের কয়েকটি বিজ্ঞান সমিতির সদস্য ছাড়াও তিনি ইতালীর আন্তর্জাতিক তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান কেন্দ্র ICTP-এর একজন সিনিয়র এসোসিয়েট, বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডীন এবং বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। প্রফেসর ইসলাম বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি ও নিউ ইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্সর সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্স ও লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের নির্বাচিত ফেলো।