চিঠি শব্দটির প্রেমে জড়িয়ে যাই মূলত আমার বন্ধু মুশরাত পারভীন শিলুর সাথে। ছোটোবেলা থেকে বাবা—মা এবং বড়ো ভাইয়ের প্রচণ্ড রকম শাসনের গণ্ডি পেরিয়ে পরীক্ষা পাশের চিঠি মুখস্থ পড়া ও লেখা ছাড়া আমার সেভাবে চিঠির সাথে সম্পৃক্ততা হয়নি। প্রিয় স্বামীকে চিঠি লিখেছি আর প্রাণ ভরে চিঠি লিখেছি প্রিয় বন্ধু শিলুকে। চিঠির প্রেম ছিলো আমার আর আমার এই বন্ধুর জন্য অত্যন্ত আন› আর ভালোলাগার বিষয়। এই চিঠি সংক্রান্ত আরও একটিবিষয়টি সেই সময়টাতে একটুব্যতিক্রমও ছিলো। তা হলো আমি থাকতাম পূর্ব রামপুরা আর আমার বন্ধু শিলু থাকত পশ্চিম রামপুরা। প্রতিদিন আমরা একসাথে ক্লাসে যেতাম। প্রায় প্রতিদিন আমরা একজন অন্যজনকে চিঠি লিখতাম ছোটো বড়ো বিভিন্ন সাইজের। আমার রোজ হতো কিন্তু আমরা পরস্পরের হাতে চিঠি দিতাম না। ডাকটিকেট যুক্ত হলু খামে দু’জন দু’জনার ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করতাম। তখন রামপুরার মেইন রোড থেকে পশ্চিম রামপুরা যাওয়ার মুখে একপাশে থাকা চিঠির বক্সে চিঠি ড্রপ করতাম। দু’জনার ঠিকানায় চিঠি যাে‧ছ অথচ ড্রপ করছি আমরা একই ডাকবাক্সে। আমার চিঠি আসত পোস্ট অফিস ঘুরে আরামবাগে আমার অফিসের ঠিকানায়। আর আমার বন্ধুর চিঠি যেত ওর বাসা বা অফিসের ঠিকানায়। এতো এতো চিঠি পেতাম আমরা দু’জন দু’জনার কাছ থেকে অথচ আমাের আগ্রহ একটুও কমত না। আমাের জীবনের দারুণ আয়োজন ছিলো বন্ধুত্বতার এ চিঠিগুলো। এখনও আমাের দুই বন্ধুর কাছে দু’জনার বেশির ভাগ চিঠিই সংরিক্ষিত আছে। মাঝে মাঝে পুরোনো সেই চিঠির ঝাঁপি খুলে বসি আমরা যে যার মতো। আমার খুব ইচ্ছে আছে আমার, দু’বন্ধুর চিঠিগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে একটা কিছু আয়োজন করে সংরক্ষণ করে যাওয়া।
লেখক নাজনীন নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমফিল করেছেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি করেছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে তার সংসার। ইতোমধ্যে তার লেখা বিভিন্ন জনরার ৪২টি একক মৌলিক বই প্রকাশিত হয়েছে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ তিনি। তার লেখার মূল উপজীব্য হচ্ছে মানুষ, প্রেম, দেশাত্মবোধ, মনুষ্যত্ব এবং মানবতা। তিনি নিভৃতচারী একজন মানুষ। সংসারের পাশাপাশি নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন সাহিত্য চর্চায়। তাইতো নিজেকে নয় নিজের লেখা, বোধ, উপলব্ধি তথা নিজের সৃষ্টিকে পুরোদস্তুর সমৃদ্ধ করতে চান তিনি। পৌঁছে দিতে চান মানুষের মন ও মগজের ভাবনায়। মানুষের আত্মউপলব্ধিতে রোপণ করতে চান বিশুদ্ধ বোধের অখণ্ড সন্তরণ। লেখার মাধ্যমে তিনি মানুষের কল্যাণ করতে চান। মানুষের মনন ও বিশ্বাসের পৃথিবীতে মানবিকতার বিশুদ্ধ বোধ ছড়িয়ে দিতে চান। তার লেখালেখির উদ্দেশ্য এটাই।