নরকের খোলা দ্বার দিয়ে অশুভর প্রবেশ ঘটেছিল অনেক আগেই। তারপর থেকে সে দ্বার খোলাই ছিল। একে একে এসেছে কত শত অভিশপ্ত প্রেতের দল। কখনো সে প্রেত উঠে এসেছে কল্পনার নরক থেকে, কখনো বা সে জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর মানুষের অন্তর্জগতে। নরক উঠে এসেছে পৃথিবীতে। ভালোবাসা নীল হয়ে উঠেছে ভয়ের বিষাক্ত ছোবলে। দেখতে চান সেই বিষাক্ত নরকের চিত্র? অনুভব করতে চান সেই থর থর কম্পন হৃৎপিন্ডের গহন গভীরে? তবে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসো এই নরকের আলিঙ্গনে। দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর প্রেতের দল আপনার অপেক্ষায়। আপনারই অপেক্ষায়।
মারীচমারির জঙ্গলের মাথায় তখন রুপোর থালার মতো চাঁদ উঠেছে। যতদূর চোখ যায়, এই উঁচু টিলাটার নীচের পৃথিবী ঝিমঝিমে অন্ধকারে ডুবে আছে।
মারীচমারির জঙ্গল একটা সময়ে বেশ ভয়ের কারণ ছিল স্থানীয় মানুষের কাছে। এই জঙ্গলে বাস ছিল এক কুখ্যাত ডাকাতের। শিবা ডাকাত।
শোনা যায় জঙ্গলের কোনও এক গভীরে সেই ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত এক মন্দির আছে। সেখানে রয়েছে মা মারীচমারির পাথরের মূর্তি, যার নামেই জঙ্গলের নাম। শিবা ডাকাত নিজের হাতে পাথর কুঁদে তৈরি করেছিল দেবীর মূর্তি। স্থানীয় লোকেরা বলে, শিবা ডাকাত দেবীকে সত্যিকারের মুণ্ডমালা পরাত। মাসে বারোটার বেশি মানুষ সে খুন করত না। কারণ দেবীর মুণ্ডমালা তৈরি করতে বারোটা মাথা লাগত। প্রতি পূর্ণিমায় দেবীর মালা পালটে দিত সে। শোনা যায়, এই দেবীর বাহন হল নেকড়ে। প্রতি ফাল্গুনী পূর্ণিমায় নাকি জেগে উঠত সে। তার জন্য মানুষের টাটকা রক্ত এনে দিত শিবা। সেই রক্তে স্নান করে, রক্ত পান করে একবছরের জন্য আবার পাথরে পরিণত হত নেকড়ে। লোকে বলে, একবার ফাল্গুনী পূর্ণিমায় মানুষ জোগাড় করতে পারেনি শিবা।
-- “ধুর এসব শুনতে শিহরণ জাগে ঠিকই, কিন্তু যতই রোমাঞ্চকর হোক না কেন বিশ্বাসযোগ্য নয়!”
তখনই আমরা ঠিক করে ফেললাম ডিনার সেরে আমরা বেরিয়ে পড়ব মারীচমারির পূর্ণিমা উপভোগ করতে। পূর্ণিমা রাতে সাদা জ্যোৎস্নায় কী অপরূপ রূপ নেবে মারীচমারি, তা ভেবেই আমাদের শিহরণ জাগছিল।