রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রবের পক্ষ থেকে হেদায়াত পৌঁছে দিয়েছেন। এতেই রয়েছে আলোকবর্তিকা ও হেদায়াত। এটা ব্যতীত সকল কিছুই অন্ধকার ও ভ্রষ্টতা। সুন্নাত আঁকড়ে ধরার বিপরীতে যা কিছু রয়েছে সেগুলির পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। তা হলো, দ্বীনের মধ্যে বিদ'আত সৃষ্টি করা এবং সুস্পষ্ট এই মানহাজের বিপরীত কিছুর অনুসরণ করা। মুসলিমদের ঐক্য ও তাদের এক কাতারে আসা সম্ভব নয় সর্বশেষ নবী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ ব্যতীত। তাই তারা যখনই ঐক্যবদ্ধ ও এক হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, তারা যদি সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, তাহলে নানা ফিরক্কায় বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং সুস্পষ্ট গোমরাহীতে পতিত হবে।
প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন,
‘আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হলো যে, সালাতও? তিনি বললেন, সে ক্ষেত্রেও যা নষ্ট করার তোমরা কি তা করনি'?'
'একদিন আমি দিমাস্কে আনাস ইবনু মালিক -এর নিকট প্রবেশ করলাম আর তখন তিনি কাঁদছিলেন। আমি বললাম, আপনি কেন কাঁদছেন? তখন তিনি বললেন, (রাসূলুল্লাহ -এর যুগে) আমি যে সব বিষয় দেখেছিলাম, তার মধ্যে কেবল এই ছালাত ছাড়া কোন কিছুই আমি চিনতে পারছি না। এমনকি ছালাতও নষ্ট হয়ে গেছে'। 2
উক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হল যে, সাহাবী, তাবি'ঈ ও তাবি' তাবি'ঈগণের যুগেও কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে 'ইবাদতের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটেছিল। যেগুলোর সাথে সুন্নাতের কোন সম্পর্ক ছিল না।
তার মধ্যে সালাতের মধ্যে রাফউল ইয়াদাঈন উল্লেখযোগ্য। এ কিতাবে এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলি বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। উল্লেখ যে, শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ -এর নুরুল আইনাইন বইকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।
যুবায়ের আলী যাঈ (উর্দু: حافظ زبیر علی زئی ) একজন প্রচারক, ধর্মতত্ত্ববিদ, ইসলামী পণ্ডিত, মুহাদ্দিস এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন বণিক সামুদ্রিক ছিলেন। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস তিনি। এবং সুনানে আরবা'আ এবং মিশকাত আল মাসাবীহ এর সবচেয়ে বেশি নির্ভুল তাহকিক করেছেন তিনি। এবং অন্য অন্য অসংখ্য হাদিস ও হাদিস গ্রন্থ তাহকিক ও তাখরিজ করেছেন। তাকে পাকিস্তানের আলবানী নামে অভিহিত করা হয়। যুবায়ের আলী যাঈ পশতুন উপজাতি থেকে এসেছিলেন, এটি নিজেই বৃহত্তর দুররানি কনফেডারেশনের একটি শাখা ছিল যাঁরা তাদের বংশদ্ভুতভাবে দুররানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ দুরানির কাছে ফিরে এসেছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে পাঞ্জাব এর এটক জেলার কাছাকাছি পীরদাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিয়ে করেন এবং তার ৩ ছেলে (তাহির, আবদুল্লাহ সাকিব ও মুয়াজ) এবং চার কন্যা ছিলেন। তিনি ছিলেন বহুভাষা (বহু ভাষায় কথা বলতে সক্ষম); স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন থেকে তাঁর মূল ভাষা হিন্দকো ভাষা এবং আরবি ভাষা ছাড়াও তিনি ইংরেজি, উর্দু, পশতু এবং গ্রীক ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন এবং ফার্সি পড়তে ও বুঝতে পারতেন।[১] হাফিজ যুবায়ের আলী যাঈ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং পরবর্তীতে দুটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, একটি ১৯৮৩ সালে ইসলামী পড়াশোনা এবং অন্যটি ১৯৯৪ সালে লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষায় পাস করেন। অতিরিক্ত হিসাবে, তিনি ফয়সালাবাদের সালাফি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চতুর্থবার স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। হাফিজ জুবায়ের আলিজাই ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ এ পক্ষাঘাতের আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রায় দুই মাস ধরে শিফা আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ইসলামাবাদে ভর্তি হওয়ার পর, রবিবার ১০ নভেম্বর ২০১৩ সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি বেনজির ভুট্টো হাসপাতালে রাওয়ালপিন্ডিতে মারা যান।