এ এক অদ্ভুত মজার, শিক্ষার এবং বিনোদনের বই। এ হল, বলতে গেলে, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা-কাহিনি সকলের ওপর এক অভিনব গোয়েন্দাগিরি। যেন ফেলুদা খতিয়ে দেখছে তার অনুসন্ধানের বীজগণিত, রহস্যমোচনের রহস্য। দেবাশীষ সরকার তাঁর এই অবিশ্রান্ত গবেষণার ফসলটির নাম রেখেছেন 'ফেলুদা এসেটেরা', যদিও নামকরণটা বইয়ের সম্পর্কে অনেকখানি কমিয়ে বলা। কারণ ফেলুদা-কাহিনিতে সত্যজিৎবাবুর প্রায় খেলাচ্ছলে ছড়িয়ে দেওয়া হাজারো অপরূপ তথ্যের নামগোত্র, ঠিকানা, ভুগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান আতিপাতি করে খুঁজে বার করা চাট্টিখানি কাজ না। কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস সাহিত্য নিয়ে এহেন গবেষকমহল শতাব্দীকাল ধরে বহরে বাড়ছে এবং চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হোমসিয়ানার মতো এখন এক ফেলুয়ানারও উৎপত্তি হল 'ফেলুদার এসেটেরা' দিয়ে। সত্যজিৎবাবু এ-বই হাতে পেলে তাঁর কাজের জায়গায় বসে বজ্রকণ্ঠে ছেলেকে হাঁক পেড়ে বলতেন, 'বাবু! দ্যাখো, দ্যাখো, ফেলুকে নিয়ে কী কাণ্ড শুরু হল এবার।'
তদন্ত চলাকালীন ফেলুদাকে কম উত্তর জোগাতে হয় না তোপসে ও লালমোহনবাবুর। সেসবের চকচকে উত্তর তো আছেই, সেইসঙ্গে ফেলুদাও ওই দু'জনকে নিজের কোনো মতলব বা ভাবনার সাউন্ডিং বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন, যাকে বলে একটা আইডিয়াকে বাজিয়ে দেখতে। হোমস যেমনটি করেন ওয়াটসনকে, অ্যারকুল পোয়ারো করেন হেস্টিংসকে। তবে ফেলুদার এইসব প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা আলাদা প্রয়োজনও আছে সত্যজিতের লেখায়। তিনি এইসব আদানপ্রদানের অজস্র তথ্য গুঁজতে চান তাঁর অগণিত কিশোর-কিশোরী পাঠক-পাঠিকার মগজে। কারণ দিনের শেষে তিনি ফেলু-কাহিনিকে বেঁধে রাখতে চাননি নিছক বিনোদনে। রহস্যকাহিনির সঙ্গে অবলীলায় জুড়ে দিয়েছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অলক্ষ্য মধুভাণ্ড। ফেলুদা-সাহিত্য বাস্তবিকই ছোটোদের এক খুদে বিশ্ববিদ্যালয়।