দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া একটি দেশ আঁতুড়ঘরে যার নাম পাকিস্তান। এই পাকিস্তান আবার ভৌগোলিক করাতকলে দুটো ভাগে বিভক্ত–পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান তথাকথিত ধর্মের কল বাজানো গণতন্ত্র ও মানবতার ধ্বজাধারী শাসকদের নেক নজরে থাকলেও পূর্ব পাকিস্তান বরাবরই পিষ্ট ছিল বেনিয়া আর লুণ্ঠনকারীদের জাঁতাকলে।
ফলে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষদের এই ভূখণ্ড হয়ে ওঠে সম্পদহীন মায়াবী কঙ্কাল। এই গাঙেয় উপত্যকায় বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিন্দু- মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান চর্যাপদের আমল থেকে লালিত হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংহতির মর্মমূলে ছড়িয়ে দেয় ঘৃণার বিষবাষ্প।
আর এভাবেই শুরু হয় সর্বত মঙ্গলের বাহক কাহ্নপাদদের আকাঙ্ক্ষার অবধারিত অবনমন। অতঃপর শস্যবীজে জেগে ওঠে প্রতিরোধের আগুন। সেই আগুনের শপথ নিয়ে এই ভূখণ্ড রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন একজন অগ্রনায়ক, ভাবপ্রবণ স্বাদেশিকতায় উজ্জীবিত মানুষদের ত্রাণকর্তা হিসেবে; তিনি আর কেউ নন এ যুগের স্পার্টাকাস। পেছন দিকে আঁচড়ানো চুল ও রূঢ় চওড়া মুখের শেখ মুজিব–দরাজ গলা ও বাগ্মিতার অমোঘ অভিঘাত দেশ এবং দেশের বাইরে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে উচ্চাসনে। হ্যামিলনের বংশিবাদকের মতো ডাক দিলেন সমগ্র জাতিকে গাঁথলেন এক সুরে।
জেগে উঠল বাঙালি–অবহেলা, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। উজানস্রোতের বিরুদ্ধে আপামর মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম, প্রেম-দ্রোহ-বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম আলেখ্য এবং একটি হিন্দু পরিবারের তিলে তিলে ক্ষয়ে যাওয়ার কাহিনি এই উপন্যাসের পরতে পরতে। হত্যা, ধর্ষণ, ষড়যন্ত্র ও ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। অতঃপর বঙ্গবন্ধু’র আনুকূল্যে এই উপন্যাসের প্রোট্যাগনিস্ট যে দু’জন তাদের মধুরেণ সমাপয়েৎ।
জিল্লুর রহমান শুভ্র, জন্ম ১২ অক্টোবর, ১৯৬৪ ইং; নওগাঁ জেলার ধামইর হাট থানার ইশবপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত রাংগাল ঘাট গ্রামে। আজন্ম দরিদ্রতা তার মাথার উপর খড়গ হয়ে অবলীলায় শাসন করেছে। তদুপরি শৈশবে স্বচক্ষে দেখেন ১৯৭১-এর দানবীয় নৃশংসতা। এই নৃশংসতার মধ্যেই বাবাকে হারিয়ে বিপর্যয়ের চূড়ান্ত সুখ অনুভব করেন তিনি। কিন্তু জীবন থেমে থাকেনি। বিভিন্ন অভিঘাতের সংবেদনশীল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছেন জীবনের জটিল পথ।
স্কুলজীবনে ছিলেন অসম্ভব মেধাবী ছাত্র, কলেজে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন বাউণ্ডুলেপণায়; ফলে লেখাপড়ার গতি হয় ব্যাহত। কলেজবন্ধুরা তাকে হিরো-হিরো বলে ক্ষেপাত। হিরো হওয়ার উদগ্র বাসনা তাকে তাড়া করে বুনো ষাঁড়ের মতো। ফলে উচ্চাভিলাষী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেন তিনি। পালিয়ে আসেন ঢাকায়। বিপরীত জীবনের নোনতা স্বাদ গ্রহণে বাধ্য হন তিনি। বদল করেন একের পর এক পেশা। জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অপরাধ কর্মে। পূর্ণ করেন পাপের ষোলকলা; তবে কোথাও থিতু হননি তিনি। দৌড়ের উপর থেকেও লিখে গেছেন দিস্তার পর দিস্তা। সেসব লেখা ছাইভস্ম হলেও লেখার বীজ তার সৃজনশীল মনোভূমিতে মুকুলিত হয়েছে তখন থেকেই।
অ্যাগোরাফোবিয়া ও আত্মশ্লাঘায় নির্মোহ এই লেখক আজ অব্দি লিখে যাচ্ছেন অবিরাম। বাংলা ও ইংরেজি দু ভাষাতেই লিখেছেন। The God of Love & Fallen Leaves, The Dark Moon, A Creative Killer, Bible of Love & Obscurity লন্ডনের Olympia Publishers থেকে প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ঢাউস উপন্যাস ’চন্দ্রদাহ’ ও কবিতার বই ’ঝাউপাতার ঝাঁপতাল’ প্রকাশিত হয়েছে পুণ্ড্র প্রকাশন থেকে। অনুপ্রাণন প্রকাশন থকে প্রকাশিত হয়েছে গল্পগ্রন্থ ঘোড়ামুখী (মে-২০২৫)