বিংশ শতকের প্রথম কয়েক দশক। সে বড় অস্থির সময় বঙ্গদেশে। বাংলায় তখন অগ্নিযুগ। বঙ্গজ বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশরাজ তখন সম্মুখসমরে। সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশ্বাসী তরুণদলের বিবিধ দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে ইংরেজ প্রশাসনকে, এবং যেনতেনপ্রকারেণ বিপ্লবদমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে কলকাতার পুলিশবাহিনী। সে এক অন্য লালবাজার। অদেখা লালবাজার। সেই টালমাটাল সময়ই এই বইয়ের আধার। যে বইয়ে অভিজ্ঞ আইপিএস অফিসার সুপ্রতিম সরকার রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের মহাফেজখানার প্রামাণ্য নথিপত্র থেকে তুলে এনেছেন অজানা-অচেনা বিপ্লবীদের নির্ভয় আত্মবলিদানের বীরগাথা। মেদিনীপুরে তিন বছরে উপর্যুপরি তিন ব্রিটিশ জেলাশাসকের হত্যাই হোক বা দার্জিলিং পাহাড়ে বড়লাটকে হত্যার অসমসাহসী প্রয়াস, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে অকুতোভয় যুবকের হাতে ইংরেজদরদি উকিলের নিধনই হোক বা পুলিশের নির্যাতন-নিবাস থেকে ছদ্মবেশে দুই বিপ্লবীর অন্তর্ধানের রোমহর্ষক বিবরণী, অথবা নিপীড়ক ইংরেজ প্রশাসককে হত্যা করে সারা বিশ্বে হইচই ফেলে-দেওয়া দুই অসমসাহসিনী বাঙালি কিশোরীর কাহিনি, কিংবা স্বাধীনতা আন্দোলনে অজ্ঞাতনামী দুই বঙ্গনারীর অবদানের অশ্রুত আলেখ্য, এই বইয়ে উদযাপন বিস্মৃত এবং উপেক্ষিত বিপ্লবীদেরই। নামে বই, আসলে স্মৃতিতর্পণ। তথ্যভারে ক্লিষ্ট নয়, নয় আবেগের আতিশয্যে আক্রান্ত। স্বাদু গদ্যে, নির্মেদ লিখনশৈলীতে এ এক ভিন্নতর আঙ্গিকে ইতিহাসযাপন। পঠনে থ্রিলারধর্মী, গঠনে গবেষণাপ্রবণ। অগ্নিযুগের বাংলার ইতিহাসচর্চায় এ বই এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
সুপ্রতিম সরকারের জন্ম কলকাতায়, ৩০ মে ১৯৭১। আশৈশব কৃতী ছাত্র। ছাত্রজীবন কেটেছে সেন্ট লরেন্স হাই স্কুলে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণির স্নাতক। আনন্দবাজার পত্রিকায় স্বল্প দিনের সাংবাদিকতার পর ১৯৯৭ সালে যোগ দেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে। কর্মজীবনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এবং কলকাতায় নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে কলকাতা পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মরত।কর্মক্ষেত্রে প্রশংসনীয় দক্ষতার জন্য ২০১৫-য় সম্মানিত হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল’-এ, ২০১৭-য় ভূষিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত বিশেষ সম্মানপদকে।পেশায় আই পি এস অফিসার, নেশায় আপাদমস্তক ক্রিকেটানুরাগী। লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ‘গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার’।