"কৃষ্ণকুমারী" নাটকটি রাজস্থান অঞ্চলের দুই রাজ্য—মেওয়াড় ও মারওয়ার এর রাজবংশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও তার পরিণতিতে রাজকন্যা কৃষ্ণকুমারীর আত্মবলিদানের করুণ কাহিনি নিয়ে রচিত
"কৃষ্ণকুমারী" মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত একটি বিখ্যাত দ্বিপদী নাটক (tragedy)। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম ট্র্যাজেডি নাটক হিসেবেও পরিচিত। নাটকটি ১৮৬১ সালে প্রকাশিত হয়।
📖 সারমর্মঃ
"কৃষ্ণকুমারী" নাটকটি রাজস্থান অঞ্চলের দুই রাজ্য—মেওয়াড় ও মারওয়ার এর রাজবংশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও তার পরিণতিতে রাজকন্যা কৃষ্ণকুমারীর আত্মবলিদানের করুণ কাহিনি নিয়ে রচিত।
মূল কাহিনি সংক্ষেপে:
রাজস্থানের মেওয়াড় রাজ্যের রাজকন্যা কৃষ্ণকুমারী ছিলেন অত্যন্ত রূপবতী ও গুণবতী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য দুটি রাজ্য—যোধপুরের রাজকুমার জাগৎসিংহ ও জয়পুরের রাজকুমার ভীমসিংহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই বিবাহকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে এবং যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়।
দুই পক্ষই নিজেদের মর্যাদা ও শক্তির জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। কৃষ্ণকুমারী এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত এড়াতে চায়। তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর জন্য দুই রাজ্যের মধ্যে সংঘাত হলে বহু প্রাণহানি ঘটবে এবং শান্তি চিরতরে নষ্ট হবে।
অবশেষে, তিনি নিজের আত্মবলিদানের মাধ্যমে যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিষপান করে আত্মাহুতি দেন, যাতে তাঁর মৃত্যু এই দুই রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের কারণ না থাকে।
🎭 প্রধান চরিত্রসমূহ:
কৃষ্ণকুমারী – মেওয়াড়ের রাজকন্যা
উদয়সিংহ – কৃষ্ণকুমারীর পিতা ও মেওয়াড়ের রাজা
ভীমসিংহ – জয়পুরের রাজপুত্র
জগৎসিংহ – যোধপুরের রাজপুত্র
✍️ নাটকের বিশেষত্ব:
এটি বাংলা সাহিত্যে ট্র্যাজেডি ধাঁচের প্রথম নাটক।
মানবতাবোধ, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, নারীশক্তি ও নৈতিকতার গভীর চিত্র ফুটে উঠেছে।
নাট্যগুণে এটি অনেকাংশে পাশ্চাত্য নাট্যরীতির অনুপ্রেরণায় রচিত, বিশেষ করে শেক্সপিয়রের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
🕊️ বার্তাবহ দিক:
এই নাটক আমাদের শেখায়—
ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়ে বৃহত্তর স্বার্থ কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ,
নারীর আত্মত্যাগ সমাজ ও জাতির শান্তির জন্য কতটা গভীর হতে পারে,
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি, ১৮২৪ – ২৯ জুন, ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাঁকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।