ভূমিকা শৈশব থেকেই আমার মনে কবিতার একটি দাপট চলছে। যৌবন পেরিয়ে বার্ধ্যক্যে উপনীত হয়েছি, তবু কবিতা আমার সঙ্গ ছাড়েনি। জীবন-পথে চলতে চলতে প্রকৃতি, দেশ, সমাজ এবং আমার সুখ-দুঃখ-ভালোবাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সংস্পর্শে সময় সময় যে প্রবল হƒদয়াবেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকেই এসব কবিতার উদ্ভব। কবিতাগুলো ইংরেজি ১৯৯০ সালের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রচিত হয়েছে। দু-একটি কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। একপ্রকার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও নীরবতার কারণে কবিতাগুলো এত দিনে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার সুযোগ পাইনি। ঘনিষ্ঠজনের অনেকে আজও জানেন না সেই কবে থেকে নীরবে কবিতা লিখে চলেছি। ‘হৃদ-যন্ত্রণা’ কবিতাগ্রন্থে প্রকৃতি, ধর্ম, দেশ, জাতি, জননী, সমাজ ও সর্বসাধারণের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের চেষ্টা করেছি। আজ জীবনসায়াহ্নে মনে হয়েছে, এসব কথামালা গ্রন্থাকারে লিখে রেখে যাব। কবিতা হিসেবে লেখাগুলো কতটুকু কাব্যোত্তীর্ণ এবং কবিতাপ্রেমীদের নিকট গ্রহণযোগ্য সে বিচারের ভার তাদের ওপর। আমি কেবল আমার ছোট ছোট আবেগের স্ফুরণ এ কবিতাগুচ্ছ তাদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করলাম। কবিতা মুদ্রণের ক্ষেত্রে উইজার্ড কম্পিউটার মিরপুর-১, ঢাকা মুদ্রণ করেছে এবং সরকার কমার্শিয়াল এজেন্সির মো. সুমন হোসেন, আদাবর, মোহাম্মপুর, ঢাকার কম্পিউটার অপারেটর সংশোধন করে দিয়েছে। আমার ছোট ভায়রা ভাই ফারুক উর রশীদ মুদ্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সর্বোপরি সুদূর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী আমার একমাত্র কন্যা নাসরিণ আকতার শিখা উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তা দানসহ আমাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করেছে। কবিতাগ্রন্থটি রচনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সকল সহযোগিতার জন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আ. ন. নাসির উদ্দিন আহমদ
আ. ন. নাসির উদ্দিন আহমদ জন্ম : আ. ন. নাসির উদ্দিন আহমদ ২৮ মে ১৯৪২ সালে রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার অন্তর্গত নিভাকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম ফয়েজ উদ্দিন আহমদ এবং মাতার নাম মরহুমা আকিরন নেসা বেগম। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ : তিনি নিভাকৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি মাছপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং কুষ্টিয়া কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারূপে চাকরিকালে স্বদেশে সাবেক নিপা, কোটা এবং পরিকল্পনা একাডেমি থেকে কমিউনিকেশন কোর্স, বিশেষ আইন প্রশিক্ষণ কোর্স, প্রকল্প প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জনাব আহমদ ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইনে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের রয়েল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পাবলিক সেক্টর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। লন্ডনের অ্যাংলো ওয়ার্ল্ড স্কুল থেকে ইংরেজি ভাষা বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স বিভাগ থেকে কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি একাধিক স্বল্পমেয়াদি সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। কর্মজীবন : তিনি ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার রামদিয়া বি.এম.বি.সি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের শেষ দিকে তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানা সদরে অবস্থিত বালিয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন এবং সেখানে ১৯৭৩ সালের শেষ অবধি কর্মরত ছিলেন। ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি এবং ১৯৭৪ সালের শুরুতে তিনি রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানাধীন মাছপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত স্পেশাল ইপিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারূপে বাংলাদেশ সচিবালয়ে যোগদান করেন। তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও খনিজ শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বেতার (প্রেষণে) এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যথাক্রমে সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, পরিচালক (প্রশাসন, বাংলাদেশ বেতার) ও উপসচিব পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরিজীবনে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসফরে তিনি ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ২০০০ সালের মে মাসে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত নব প্রতিষ্ঠিত আল-নাহিয়ান উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে চাকরিকালে নিজ এলাকায় রাস্তাঘাট, খাল, বিশেষত স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কল্যাণে পুকুর খননের কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের ‘আমার দেশ’ অনুষ্ঠানে মাস্টার ভাই হিসেবে কথিকায় অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানেও তিনি শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি থিয়েটার ও যাত্রা অভিনয়ে অংশগ্রহণ করতেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হৃদয়গ্রাহী কবিতা আবৃত্তি করতেন। তার লেখা কবিতাগ্রন্থের মধ্যে ‘সুখপাখির যন্ত্রণা’, ‘ভালোবাসা-যন্ত্রণা-অশ্রু’, ‘ক্রন্দন’ ও ‘ছড়ায় ছড়ায় ছড়িয়ে সোনামণি’ অন্যতম। অবসর জীবন : তার একমাত্র কন্যা যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে বসবাস করেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র সপরিবারে কানাডার অধিবাসী। দ্বিতীয় ও কনিষ্ঠ পুত্রদ্বয় ও পুত্রবধুদ্বয় বাংলাদেশে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী মোসাম্মাৎ আকতার বানু একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। জনাব আহমদ ২০০৮ সালে হজব্রত পালন করেন। এক চমৎকার পারিবারিক পরিমণ্ডলে থেকে বাগান পরিচর্যা, গ্রাম পরিদর্শন, দেশভ্রমণ, সমাজসেবা, লেখালেখির কাজ, পারিবারিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং আদরের নাতি-নাতনিদের সাথে একাত্ম হয়ে অবসর জীবন-যাপন করছেন। কবিতা পাঠ, কবিতা রচনা, নাটক দেখা এবং গান শোনা তার প্রিয় শখ।