মণিকর্নিকায় চণ্ডাল

মণিকর্নিকায় চণ্ডাল (হার্ডকভার)

বইটি বিদেশি প্রকাশনী বা সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করে আনতে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ কর্মদিবস সময় লেগে যেতে পারে।

জুলাই জাগরণ ২৫ image

পাঠকেরা একত্রে কিনে থাকেন

এই ই-বুক গুলোও দেখতে পারেন

বইটই

বইটির বিস্তারিত দেখুন

আর এভাবেই কেটে গেল দুপুরটা। তারপর একসময় সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত নামলো। তাই ওরা বেরোনোর তোড়জোড় করতে শুরু করলো। এবং রাত প্রায় দশটা নাগাদ রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে মণিকর্ণিকা ঘাটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো ওরা তিনজন। কিন্তু শ্মশানে ঢোকার মুখে হঠাৎ করেই দর্পণের সামনে এসে দাঁড়ালো এক সাধু। দাঁড়িয়েই সে গম্ভীরভাবে বলল, "এতো দুশ্চিন্তা করিস না। সে আসছে তাই যার কাছে যাচ্ছিস নিশ্চিন্তে যা। যদিও লড়াই সহজ হবে না। হারতেও পারিস আবার জিততেও পারিস।"


কথাটা হুড়হুড় করে বলেই সাধু দর্পণকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল শ্মশান থেকে। দেখে দর্পণ, প্রহ্লাদ আর কণিকা তিনজন‌‌ই ফিরে তাকালো সাধুর দিকে। তাকাতেই দেখলো কমর অবধি ছড়ানো জটা, সারা গায়ে ছাই মাখা আর একটা খুব ছোটো কাপড় কোমরে বেঁধে সাধু হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে শ্মশান থেকে। তাই দর্পণ প্রহ্লাদের দিকে ফিরে প্রশ্ন করলো, "আচ্ছা বাবা, সাধু ঠিক কি বলতে চাইলো বলোতো ?"


দর্পণের প্রশ্ন শুনে প্রহ্লাদ কিছু বলার আগেই কণিকা বলে উঠল, "সেটাই তো !! লোকটা যে কি বলতে চাইল কিছুই তো বুঝতে পারলাম না। প্রথমে বলল দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তারপর বলল সে আসছে। কিন্তু কে আসছে সেটা বলল না। এরপর বলল যে যার কাছে যাচ্ছিস নিশ্চিন্তে যা। ও কি জানে যে আমরা এখন চণ্ডালের কাছে যাচ্ছি ?"


"হতেই পারে ও জানে। হয়তো গতকাল চণ্ডাল বাবার কাছে আমাদের দেখেছিল। তাই বলতে চাইলো যে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি কারণ চণ্ডাল বাবা আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে।"


দর্পণের কথা শুনে কণিকা তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "কিন্তু এই সবের সাথে ও এটাও তো বলল যে লড়াই সহজ হবে না। আমরা হেরেও যেতে পারি আবার জিততেও পারি। মানে ও বলতে চাইছে যে সমস্যার সমাধান হতেও পারে আবার নাও হতে পারে…"


কথা শেষ করতে পারলো না কণিকা। তার আগেই গলা ধরে এলো ওর। দেখে প্রহ্লাদ তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "আচ্ছা মুস্কিল তো ! এভাবে আসেপাশের এতো কথাকে ধরলে চলে ? কার মনে কি আছে বা কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাধু এই কথাটা বলেছে এসব কিছু না জেনেই যদি কাঁদতে বসেছো তাহলে তো কিছুই আর করার থাকবে না। ছাড়ো এসব কথা। যেখানে যাচ্ছো চুপচাপ চলো।"


কথাটা বলেই প্রহ্লাদ এগোতে শুরু করলো। আর প্রায় সাথে সাথেই ওর পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। তাই চটপট পকেট থেকে ফোনটাকে বার করে স্ক্রিনে চোখ রাখলো সে। রেখেই বিড়বিড় করে উঠল, "দেবরাজ এই সময় !"


প্রহ্লাদের কথা শুনে দর্পণ আর কণিকা অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। এদিকে ফোনটা একনাগাড়ে বেজে যাচ্ছিল তাই প্রহ্লাদ চটপট ফোনটাকে অন করে কানে চেপে ধরলো। তারপর কিছুক্ষণ হু হাঁ করে বলল, "মণিকর্ণিকা ঘাটে ঢোকার পর ডান দিকে যে কাঠের দোকানটা আছে আমরা সেখানেই আছি। দোকানটা হরিপদ বলে একজনের।"


এইটুকু বলে আবার কিছুক্ষণ হু হাঁ করে ফোন কেটে দিলো প্রহ্লাদ। তারপর দর্পণ আর কণিকার দিকে তাকিয়ে বলল, "দেবরাজ ফোন করেছিল।"


"হ্যাঁ সে তো দেখলাম‌ই। কিন্তু এখন কি দরকার তার ? আমরা কোথায় সেটা জেনে ও কি করবে ? দোয়েল তো সকালেই বলে দিয়েছিল যে সে আসবে না। এখন দেবরাজ কি বোনের হয়ে সাফাই গাইলো ?"


প্রহ্লাদের কথা শুনেই কণিকা ঝাঁঝের সাথে কথাগুলো বলে ফেলল। তারপর বেশ রাগ রাগ করে তাকিয়ে র‌ইল প্রহ্লাদের দিকে। দেখে প্রহ্লাদ শান্ত গলায় বলল, "না সে কোনো সাফাই দেয়নি। শুধু জিজ্ঞেস করছিল আমরা এখন কোথায় আছি। কারণ দেবরাজ আর দোয়েল আসছে। ওদের ফ্লাইট এই কিছুক্ষণ আগে ল্যান্ড করেছে।"


প্রহ্লাদের কথা শুনে এবার কণিকা আর দর্পণ কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইল ওর দিকে। তারপর একসময় চমক কাটতেই দর্পণ প্রশ্ন করলো প্রহ্লাদকে, "কিন্তু দোয়েল তো সকালে বলেছিল যে ও আসবে না ?"


"হ্যাঁ বলেছিল কিন্তু তোর ফোনের পর মত বদলায় ও। এখানে আসবে বলেই মনস্থির করে। তখন দেবরাজ‌ও ঠিক করে যে দোয়েলের সাথে ও আসবে। কিন্তু ওরা ঠিক করলে কি হবে কলকাতা থেকে বেনারসের ফ্লাইটের টিকিট সব বুক হয়ে গিয়েছিল। তাই ওরা প্রথমে কলকাতা থেকে দিল্লির ফ্লাইট ধরে। তারপর দিল্লি থেকে ফ্লাইট ধরে ওরা এই কিছুক্ষণ আগে নামে বেনারস এয়ারপোর্টে। এখন ওখান থেকেই ফোন করেছিল দেবরাজ। জানতে চাইলো যে আমরা কোথায় উঠেছি। কিন্তু হোটেলের কথা না বলে আমি এই মণিকর্ণিকা ঘাটের কথাই বললাম ওদের কারণ চণ্ডাল বাবা আজ দোয়েলের সাথে দেখা করতে চেয়েছে।"


প্রহ্লাদের কথা শুনে এবার কণিকা তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "কিন্তু ওদের এয়ারপোর্ট থেকে এখানে আসতে তো এক দেড় ঘন্টা লেগে যাবে।"


"সে লাগুক। ওরা আসছে এটাই অনেক। আমরা হরিপদর দোকানে অপেক্ষা করবো ওদের জন্যে। হয়তো দেখো দোয়েলের সাথে কথা বলে চণ্ডাল বাবা আজ‌ই কোনো একটা উপায় বার করে ফেলবেন।"


প্রহ্লাদের কথা শুনে কণিকার মন শান্ত হল। তাই নরম সুরে বলল, "চলো তাহলে গিয়ে বসি হরিপদর দোকানে।"


কথাটা বলেই কণিকা এগোতে গেল। সেই এগোতে গিয়েই ওর দৃষ্টি গেল দর্পণের দিকে। দেখলো যে দর্পণ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাই না এগিয়ে কণিকা প্রশ্ন করলো ওকে, "কি ভাবছিস তুই দর্পণ ?"


কণিকার কথায় সম্বিৎ ফিরতেই দর্পণ তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "মা একটু আগে যে সাধু সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল সে বলেছিল যে 'এতো দুশ্চিন্তা করিস না…সে আসছে তাই যার কাছে যাচ্ছিস নিশ্চিন্তে যা'। আমার মনে হয় দোয়েল যে আসছে সেটাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছিল সাধু। এবং ও আসছে বলেই আমরা নিশ্চিন্তে চণ্ডালের কাছে যেতে পারি সেটাই বলতে চেয়েছিল সে।"


দর্পণের কথা শুনে এবার কণিকা আর প্রহ্লাদের কপালেও ভাঁজ পড়লো। কথাটা যে দর্পণ ভুল বলেনি সেটা বেশ বুঝতে পারলো ওরা দুজন। এদিকে দর্পণ কথাটা বলে একটু চুপ করে র‌ইল। তারপর একসময় কথার রেশ টেনে বলল, "তাহলে সাধুর অন্য কথাটাও হয়তো ভুল হবে না। ও বলেছিল যে 'লড়াই সহজ হবে না…হারতেও পারিস আবার জিততেও পারিস'। তারমানে আমি বাঁচতেও পারি আবার নাও পারি।"

Title মণিকর্নিকায় চণ্ডাল
Author
Publisher
ISBN 9789391226794
Edition Edition, 2024
Number of Pages 200
Country ভারত
Language বাংলা

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

5.0

1 Rating and 0 Review

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)

Customers Also Bought

loading

Similar Category Best Selling Books

prize book-reading point
Superstore
Up To 65% Off

Recently Viewed

cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from bookshelf?

Write a Review

মণিকর্নিকায় চণ্ডাল

মহুয়া ঘোষ

৳ 600 ৳600.0

Please rate this product