উন্নত বিশ্বের শিক্ষা কারিকুলামে বিশেষ করে যে দেশগুলো শিক্ষাচর্চায় এগিয়ে আছে এমন অনেক দেশই যেকোনো ঘরানার একাডেমিক শিক্ষায় নিজ দেশের ইতিহাস ও সভ্যতার ইতিহাস পাঠকে আবশ্যিক হিসেবে মনে করে। শিক্ষাবিদদের ধারণা এই দুই ধারার ইতিহাসচর্চা ছাড়া কোনো জ্ঞানই পূর্ণতা পাবে না। এদিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের ধারণা ইতিহাস পাঠ কেবল কলা ও মানবিকী বিদ্যার অংশ। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সীমিতভাবে হলেও সভ্যতার ইতিহাস কিছুটা অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশির দশকের দিক থেকে এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কলাবিদ্যার সাথে ধীরে ধীরে সভ্যতার ইতিহাস পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে। ১৯৯৬ থেকে প্রথমে নবম দশম শ্রেণি এবং পরে নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণির কারিকুলামে সভ্যতার ইতিহাস পাঠের কিছুটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা মনে করি দেশের ইতিহাস ও মানব সভ্যতার ইতিহাস শিশুকাল থেকেই অধ্যয়ন জরুরি। এই উপলব্ধি থেকেই ১৯৯৫ সালে প্রথম প্রচীন পৃথিবী গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। অনেক বছর পর গ্রন্থটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হলো। গ্রন্থটি রচিত হয়েছে কিশোর পাঠক ও সাধারণ পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে। মানুষের ক্রমবিকাশ ও পাথরযুগ থেকে শুরেু করে প্রাচীন বিশ্বের প্রতিনিধিত্বশীল সকল সভ্যতাই স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে। পাঠক্রমভিত্তির কোনো একাডেমিক গ্রন্থের মতো গুরুগম্ভীর নয়, তথ্যে ভারাক্রান্তও নয়―এই গ্রন্থ উপস্থাপিত হয়েছে কিশোর ও সাধারণ পাঠকের আগ্রহ পূরণের চিন্তায়। তাই সহজ ও সাবলীল ভাষায় গ্রন্থিত হয়েছে। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘকাল পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে আসছিল। আগের গ্রন্থটিতে আমেরিকার প্রচীন ইতিহাস অর্থাৎ মায়া, আজটেক ও ইনকা সভ্যতা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বর্তমান সংস্করণে এই শূন্যতা পূরণ করা হয়েছে। কিশোর পাঠক তো বটেই আগ্রহী সর্বস্তরের পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারবে বর্তমান প্রাচীন পৃথিবী।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।