ইন্দো-চীন ভ্রমণ বিশেষ করে কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম দর্শনকে স্বচ্ছন্দে ব্যতিক্রমী ভ্রমণ হিসাবে গণ্য করা যায়। কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম ভ্রমণ আসলে স্বর্ণযুগের বৃহত্তর ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আস্কোর, বোরোবোদুর, বুটুয়ান, সেবু, চম্পা, চেনলা, দ্বারাবতী, ফুনান, গঙ্গা নেগারা, কালিঙ্গা, কুতাই, লাংকাসুকা, মাজাপাহিত, প্যাগান, প্যান পান, তরুমানাগারা, সিংসারি, শ্রীবিজয়া ইত্যাদি ঐতিহাসিকদের দেওয়া নাম ইন্ডিয়ানাইজড কিংডমের সামান্য অংশ দর্শন। প্রাচীন কম্বোজ এবং চম্পা দেশ সহ উত্তর-মধ্য-দক্ষিণ ভিয়েতনামের ইতিহাস, ভূগোল, ধর্ম, দর্শন, রাজকাহিনী, মন্দির স্থাপত্য ইত্যাদির সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান না নিয়ে ভ্রমণে গেলে, বেড়ানোটাই মাটি। মনে রাখার বিষয় সম্পূর্ণ কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের বেশ কিছু অংশের ভ্রমণ মানে মুখ্যত সেদেশের ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ সমূহ এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজাদের কীর্তিকলাপ বা রাজকাহিনীর টুকরো টুকরো অংশগুলি জুড়ে তৈরি করা একটি কোলাজ। এখানকার প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে ইন্দোস্ফিয়ার বা বৃহত্তর ভারতীয় সভ্যতার সমকালীন সময়ে বিদ্যমান সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ও ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা করা আমাদেরই পূর্বজদের চরণ ধূলি। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদি নিদর্শন রূপে কম্বোডিয়া এবং চম্পা দেশের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি সারা পৃথিবীর বিস্ময়। কম্বোডিয়ার নগর আঙ্কর বা আজকের সিয়েম রিপ এবং মধ্য ভিয়েতনামের মন্দিরনগরী মাই সন দুটিই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। যেগুলি রোদ, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শত্রু দেশের সেনাদের আক্রমণ, পশ্চিমী সভ্যতার নির্মম বোমাবর্ষণ-এর অভিঘাত অতিক্রম করেও টিকে আছে মানব সভ্যতার বিবর্তন এবং বিকাশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে। 'অঙ্কোরভাট' এবং 'বান্তেই সেরি' মন্দির দুটি এবং মধ্য ভিয়েতনামের 'দা-নাং' মিউজিয়াম অফ চাম (চম্পা) স্কাল্পচার না দেখলে প্রাচীন ভারতীয় কৃষ্টি ও সভ্যতার শ্রেষ্ঠ কিছু রত্ন দর্শন থেকে বঞ্চিত থাকা মনে হবে।
বইটিতে ইতিহাস, ভূগোল, মন্দির স্থাপত্য ও অলঙ্করণের কথা থাকলেও চেষ্টা করা হয়েছে সুখপাঠ্য গল্প বলার ছলে বিষয়বস্তু উপস্থাপনা করা। মূলত ভ্রমণ কাহিনীর আঙ্গিকে লেখা হলেও, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার সভ্যতার নিজস্ব গল্পটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ইন্দো-চীনের সভ্যতার ছন্দ, সুর, তাল অনুভব করবার জন্য। বইটি পড়লে কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম দর্শনের অনুষঙ্গে ইন্দো-চীনের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সম্বন্ধে যেমন এক অদ্ভুত ভালোবাসায় জারিত হয়ে উঠবেন তেমনি সনাতন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সাংস্কৃতিক জয়যাত্রার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দেখে গর্বে বুক ফুলে উঠবে।