নরসিংদীর আঞ্চলিক শব্দকোষ: এক অঞ্চলভিত্তিক ভাষার জীবন্ত দলিল
"নরসিংদীর আঞ্চলিক শব্দকোষ" বইটি শুধুমাত্র একটি অভিধান নয়—এটি নরসিংদী জেলার মানুষের মুখের ভাষা, স্থানীয় উচ্চারণ, শব্দগঠন, এবং লোকজ সংস্কৃতির সংরক্ষিত প্রতিফলন। ভাষা যেমন কেবল কথার মাধ্যম নয়, তেমনি এই বইটিও কেবল শব্দ নয়—এখানে রয়েছে ইতিহাস, জীবনযাপন আর উপকূলীয় বাংলার বর্ণময় রূপ।
📌 বইটির মূল বৈশিষ্ট্য
আঞ্চলিক শব্দের সংগ্রহ:
বইটিতে নরসিংদী জেলার স্থানীয়ভাবে প্রচলিত শত শত শব্দ, উপভাষা, লোকজ উচ্চারণ ও শব্দের অর্থ সন্নিবেশ করা হয়েছে।
উচ্চারণভেদ ও উদাহরণ:
শব্দগুলো কেবল তালিকা আকারে নয়—তাতে যুক্ত আছে উচ্চারণভঙ্গি ও প্রাসঙ্গিক বাক্য উদাহরণ, যা পাঠককে শব্দের ব্যবহারিক রূপ বুঝতে সাহায্য করে।
লোকজ সংস্কৃতির প্রতিফলন:
স্থানীয় শব্দের ভেতর দিয়েই উঠে আসে নরসিংদীর মানুষের জীবন, খাদ্য, পোশাক, কাজ, প্রথা ও বিশ্বাস।
ভাষাবিজ্ঞান ও গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি:
ভাষা গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিকদের জন্য বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করতে পারে।
📖 কেন বইটি পড়া উচিত?
✅ ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে আগ্রহীদের জন্য অপরিহার্য
আঞ্চলিক ভাষা হারিয়ে যাওয়ার মুখে, তাই এমন একটি শব্দকোষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মূল্যবান সম্পদ।
✅ গবেষণা ও ভাষাচর্চার জন্য সহায়ক
যারা বাংলা উপভাষা, আঞ্চলিকতা বা ভাষার ভিন্নতাবিধান নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এটি সহায়ক টুল।
✅ নরসিংদীর মানুষদের জন্য আত্মপরিচয়ের বই
নিজ ভাষা ও কথ্য রীতিকে মূল্যায়ন করার একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে বইটি।
"নরসিংদীর আঞ্চলিক শব্দকোষ" বইটি কেবল ভাষার বিবরণ নয়, বরং এটি নরসিংদীর সাংস্কৃতিক ইতিহাস, মানুষের মুখের জোরালো গল্প, এবং স্থানীয়ত্বকে ধারণ করার এক নিরলস প্রচেষ্টা। এটি ভাষাপ্রেমী, গবেষক এবং সংস্কৃতিসচেতন সকলের পাঠ্য হওয়া উচিত।বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ভাত
কে নরসিংদীর মানুষ ‘ভাত’ই বলে। কিন্তু যে চুলায় হাড়ি-পাতিল চড়িয়ে ভাত রান্না করা হয়, সে পাতিলকে তারা ‘পাইলা’ আর চুলাকে ‘পাহাল’ বলতেই অভ্যস্ত। নরসিংদী অঞ্চলের লোকভাষায় ‘স’ এবং ‘শ’-এর স্থলে ‘হ’ এবং ‘র’-এর স্থলে ‘ল’ অক্ষরের ব্যবহার লক্ষণীয়।
সকালকে ‘বেইন্নালা’ বিকালকে ‘বাইট্যালা’ শ্বশুরকে ‘হউর’ শাশুড়িকে ‘হরি’ এবং বড়োকে ‘বুইত্যামারা’ গরমকে ‘ততা’ টককে ‘চুক্কা’ পাটখেতকে ‘নাইল্যাখেত’ এগুলো নরসিংদীর গণমানুষের লোকভাষা।
এই জনপদকে একজন সাধারণ মানুষ তাঁর নিজ থানা রায়পুরাকে ‘লাইপুরা’, নরসিংদীকে ‘নোসন্দি’ এবং রেললাইনকে ‘লেললাইন’ বলে তখনই স্পষ্ট হয়ে উঠে তার নিজস্ব একটা পরিচয়। হারাচ্ছি সংস্কৃতি হৃদয়ের শব্দ, একান্ত আপন উচ্চারণ।
এই এলাকার মানুষ আত্মীয়-পরিজনদের সম্বোধন তাদের নিজস্ব ধারায় অভ্যস্ত।