চল্লিশটা গল্প নিয়ে একটি বই। এই চল্লিশটা গল্প ফুলের মতো। পুরো বইটা ফুলের বাগান। সেই বাগানের মালি আবু মকসুদ। তিনি পরম মমতায় চল্লিশটা ফুল ফুটিয়েছেন। প্রত্যেকটা ফুলের আলাদা রঙ, আলাদা গন্ধ। সেই রঙ বিমোহিত করবে পাঠককে, সুবাসিত করবে পাঠকের মন। আবু মকসুদের গল্পগুলো ছোট ছোট। ছোট হলেও গল্পের ভাব কিংবা বিষয়বস্তু ছোট নয়। প্রত্যেকটা গল্পে আছে পূর্ণতার ছোঁয়া। গল্পকার সমাজকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। কাছ থেকে বললে হয়তো ভুল হবে, বলতে হবে ঈগলের চোখ দিয়ে দেখেছেন। আর সমাজের সেই বিষয়গুলোই যেন তার গল্পে মূর্ত হয়ে উঠেছে। সমাজের অসঙ্গতি, বিরূপ আচারকে তিনি নিজের চিন্তায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি মানুষের গল্প বলেছেন, সমাজের গল্প বলেছেন। পাঠকের মনে হয়তো এসবই বাস্তব হয়ে উঠবে। বেশি কিছু গল্পে প্রেম এসেছে। সেই প্রেমে বাধা হয়েছে সামাজিক অবস্থান, ডেকে এনেছে বিরহ। আবার উঠে এসেছে কোনো একজন বিপ্লবীর জীবনের কথা। যে বিপ্লবীকে এই সমাজ ঠেলে দিয়েছে আস্তাকূড়ের দিকে। মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করা বিপ্লবীকে লড়তে হয় নিজের জীবনের সঙ্গে, জীবিকার সঙ্গে। এ যেন এ দেশের খুব পরিচিত দৃশ্য। আবু মকসুদের গল্পে উঠে এসেছে ধর্মীয় রীতির কথা। একজন আত্মহত্যা করা যুবকের জানাজা, দাফন নিয়েও বাধা হয়ে দাঁড়ায় কেউ কেউ। এরসঙ্গে যোগ হয় আইনি জটিলতা। এ যেন যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে আরও যন্ত্রণাকে ডেকে আনা। কখনো এসেছে পরকীয়ার মতো বিষয়। মা ও মেয়ের পরিকল্পনায় বাবা খুন করা। সবমিলিয়ে এই চল্লিশটা গল্প পাঠককে কোথাও কোথাও গিয়ে ধাক্কা দেবে। তাকে ভাবতে বাধ্য করবে নিজের পরিবার নিয়ে, এই সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে। আবু মকসুদের গল্প বলার ঢঙটাও খুবই নিজস্ব। সেখানে আছে স্বকীয়তার ছাপ। কোথাও কোনো অতিকথন নেই। খুব সহজভাবেই তিনি গল্প বলেছেন। সাবলীলভাবে ক্যারেক্টারকে টেনে নিয়ে গেছেন। পাঠককে কোনো জটিলতার মুখে পড়তে হবে না। কখনো বিরক্ত হতে হবে না। ছোট ছোট গল্পের এই বইটি এক বসাতেই শেষ করতে পারবেন যে কেউ। রবিউল কমল লেখক, সাংবাদিক
আবু মকসুদ, কবি ও সম্পাদক, ১৯৭০ সালে মৌলভীবাজার জেলার কলিমাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসার সূত্রে ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সাহিত্যচর্চায় তাঁর হাতেখড়ি আশির দশকের শেষদিকে, ছড়ার মাধ্যমে। এরপর কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধের ভুবনে বিচরণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রপত্রিকা ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং কাছাড়ের বিভিন্ন ছোটো কাগজ, সাহিত্য সাময়িকীতে তাঁর অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে বিলেত ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ ‘শব্দপাঠ’-এর সম্পাদনার দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
দূরতর গ্রহ জীবন (২০১০); ক্রমাগত ঘুমের উনুন (২০১৩); খনিজ ভুলের কাছে জমা রাখি জলের মোহর (২০১৩); মৃত্তিকার মেঘলা ভ্রমণ (২০১৪); পাশে রেখে শুদ্ধ শিশির (২০১৫); আহত ঐতিহ্যের নদী (২০২০); দুঃখগুলো মধ্যবিত্ত (২০২১); আনসার মাঠে বিকেলের রোদ (২০২২); প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে যায় (২০২২); বিবিধ মৃত্যুর রঙ (২০২২); মহান প্রেমিক কিংবা আত্মহত্যার বিড়ম্বনা (২০২৪); ছোটো আপার বিরান ভাত (২০২৪); টুকরো আয়না কিংবা শ্যাওলা ঘাট (২০২৪); একদিন ফেরার পথে জেগে উঠবে (মে-২০২৫)