বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের আমলা হিসেবে অবসর জীবনে যাওয়া লেখক শহীদ আখন্দ ১৯৩৫ সালের ২১ শে জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি অসংখ্য উপন্যাস,কিশোর সাহিত্য,ভ্রমণ উপন্যাস,অনুবাদ রচনা করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার(১৯৭৮),বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার(১৯৯৮),আবুল মনসুর আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার(১৯৭৮),নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার(২০০০),অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০১) লাভ করেন।এছাড়া,তার নির্মিত ছায়াছবি 'প্রাণ সজনী' বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
-কাহিনী সংক্ষেপঃ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে কথা সাহিত্যক শহীদ আখন্দ তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামে স্পেশাল ল্যান্ড একুইজিশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।যুদ্ধের সময়টাতে একদম কাছ থেকে এর ভয়াবহতা, হিংস্রতা অবলোকন করার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যা-ই বলি না কেন লেখক অর্জন করেছেন।আর,তার সেই স্মৃতির পাতা ঘেটে তৈরি করেছেন 'একাত্তরের কালবেলায়' এর মতো অসাধারণ এক বই।যা পাঠককে মনের অজান্তে টেনে নিয়ে যাবে পাথরঘাটা, ফেনী কিংবা চট্টগ্রামে।
পাকিস্তানি জেনারেল তথা হানাদাররা কতটা তটস্থ করে তুলেছিলো বাংলার মানুষকে,কি পরিমাণ গোলাগুলির ভেতরে সবার অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত হয়েছে তারই একটি সম্পূর্ণ বিস্তৃত কাহিনী এখানে উঠে এসেছে একটি পরিবারকে উপজীব্য করে তোলার মাধ্যমে।যুদ্ধের ময়দানে অনেক পরিবার যেমন অন্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে তেমনি অনেক পরিবার আবার মুক্তির মানুষকে ধরিয়ে দিয়েছে।এভাবেই কেটেছে সংগ্রামের নয়টি মাস।অতঃপর, বহু আকাঙ্ক্ষার স্বাধীনতা এসে ধরা দিলো বাঙালিদের হাতে।
-পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ভিন্ন গোছের কিছুর স্বাদ পেতে হলে বইটি হতে পারে প্রধান আকর্ষণ।যুদ্ধের সময়ের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে একটি পরিবারের গতিবিধি কেমন হতে পারে কিংবা কেমন ছিলো তা অনুধাবন কিংবা সেই অনুভূতিতে মিশে যেতে বইটি অবশ্যই পাঠকসমাজকে সহায়তা করবে।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বরেণ্য সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং অনুবাদক শহীদ আখন্দ। লেখালেখি শুরু করেন বাংলা বিভাগের দুই দশক পর হতে, অর্থাৎ ষাটের দশকে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম উপন্যাস ‘পান্না হলো সবুজ’। এরপর ১৯৭০ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পাখির গান বনের ছায়া’। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিলো মধ্যবিত্ত জীবনের উপাখ্যান। এরপর ১৯৭০ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পাখির গান বনের ছায়া’। শহীদ আখন্দ একজন বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন, এবং এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম পর্যবেক্ষণ করলে। তার লেখায় এপার-ওপার বাংলার সাধারণ জীবনযাত্রার একটি সূক্ষ্ম চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যায়। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে। শহীদ আখন্দ এর বই সমগ্র এর মাঝে তাই আমরা খুঁজে পাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, প্রবন্ধ, ইসলামিক ইতিহাস, কিশোর উপন্যাস, ক্লাসিক অনুবাদগ্রন্থ ইত্যাদি। অর্থাৎ সাহিত্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছাপ রেখে চলেছেন। শহীদ আখন্দ এর বই সমূহ হলো ‘দূরে, বহুদূরে’, ‘ভালমন্দ ভালবাসা’, ‘একাত্তরের কালবেলায়’, ‘সেই ভালো’, ‘বসতি’, ‘কাকাদীন ও বিজো পাওয়ার’, ‘নষ্ট পদ্য’, ‘স্বপ্নের হাসি কান্না’, ‘সম্রাট আওরঙ্গজেব: নিঃসঙ্গ রাজর্ষি’, ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’, ‘গল্প লেখার কারুকলা’। এছাড়াও তিনি কিছু বিখ্যাত কিশোর ক্লাসিক অনুবাদ করেছেন। ২০০৮ সালে তার উপন্যাস ‘ভেতরের মানুষ’ নাটক রূপে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় প্রাচারিত হয়েছিলো। ২০০৯ সালের দিকে এ গুণী লেখক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি রাজধানী ঢাকাতে বসবাস করছেন।