নবীজির মহান জীবন মুমিনের জন্য ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে যেভাবে কোনো মডেলকে সামনে রেখে, তাকে অনুসরণ করে মানুষ অগ্রসর হয়, সংশ্লিষ্ট অঙ্গনে দক্ষ ও সফল হয়, তেমনি দ্বীনী জীবনের ভেতর ও বাহিরে সফল বান্দা হতে হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মডেল হিসাবে অনুসরণ করে চলা অপরিহার্য। এর জন্য প্রথমেই যে জিনিসটির প্রয়োজন তা হলো অন্তরে তাঁর গভীর প্রেম ও ভালোবাসা পয়দা করা। ভালোবাসার মানুষের অনুসরণ ও আনুগত্য স্বভাবজাত ও স্বীকৃত বিষয়। আর কারও প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তার রূপসৌন্দর্য, তাঁর গুণবৈশিষ্ট্য এবং তাঁর ইহসান ও অনুগ্রহে সিক্ত হবার দ্বারা। এগুলোর সবই আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায়, সর্বোচ্চ গভীরতা ও ব্যাপকতায় বিদ্যমান ছিল এবং থাকবে।
সীরাতে রাসূলের একটি দিক হলো তাঁর খাসায়েল ও শামায়েল। তথা তাঁর আখলাক, অভ্যাস ও বাহ্যিক বিবরণ। মুত্তাবিয়ে সুন্নাত একজন মুমিনের জন্য এটিই প্রকৃত বিষয়বস্তু। একজন আশেকে রাসূলের ইশকের প্রমাণ রাখার এটিই প্রকৃত ক্ষেত্র। তাঁর প্রিয় রাসূল কীভাবে চলতেন বসতেন, কীভাবে খেতেন পান করতেন, কীভাবে বলতেন হাসতেন, কীভাবে শুতেন পরিধান করতেন, কীভাবে বিনয় ক্ষমা উদারতা ও বদান্যতা প্রদর্শন করতেন—এগুলোই মূল জানার বিষয়। তাঁকে অনুসরণের মূল ক্ষেত্রটা এখানেই।
এইসব আলোচনাই অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ—‘আদাবুন নবী : মহানবীর সা. আদাব ও আখলাক’-এ স্থান পেয়েছে। এ গ্রন্থের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো—হাদীস ও সীরাতের অজস্র বর্ণনা ও ঘটনায় ছড়িয়ে থাকা নবীজির অধিকাংশ আদাব ও আখলাক সরল-সংক্ষিপ্ত শব্দ-বাক্যে এসে গেছে। যেসব আখলাক ও আদাবের কথা হাজার পৃষ্ঠার গ্রন্থাবলি অধ্যয়নের পর জানা যেত, তা এ পুস্তিকার সামান্য কয়েকটি পৃষ্ঠায় অধ্যয়ন করেই জানা যাবে ইনশাআল্লাহ। এর উপস্থাপনাও এমন যে, পড়ার পাশাপাশি আমলের স্পৃহাও জাগ্রত হয়।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (উর্দূ: مفتى محمد شفيع) ১৩১৪ হিজরী সনের শা'বান মাসের ২১ তারিখে (২৫ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম "মুহাম্মাদ শফী" হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক প্রস্তাবিত। ১৩২৫ হিজরীতে (১৯০৭/১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে) তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন । তিনি ১৩৩৬ হিজরীতে (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ) দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন, তখন তার বয়স ২১ বছর ছিল। এরপর ১৩৩৭ হিজরীতে (১৯১৮/১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি খুবই তাড়াতাড়ি উচ্চতর শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৩৫০ হিজরী সনে (১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ) দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতীয়ে আযম বা প্রধান মুফতী (গ্রন্ড মুফতী) নিযুক্ত হন। দেশ বিভাগের পর তিনি তাঁর পিতৃভূমি দেওবন্দ ছেড়ে পাকিস্তান চলে আসেন। তিনি ১৩৭০ হিজরীতে (১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ) পাকিস্তানে দারুল উলুম করাচী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শত এর মত বই লেখেছেন। তার বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ "মা'আরিফুল কুরআন" যা বহুল ভাষায় অনুবাদ হয়েছে যা তিনি সমাপ্ত করেন (ঊর্দূতে) তার ইন্তেকালের চার বছর আগে। এই আলেমে দ্বীন ও মনীষী ১৩৯৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখে ইন্তেকাল করেন।[১][২]