আমার কিশোর-কিশোরী পাঠক পাঠিকারা,
“ঋজুদা সমগ্র”র দ্বিতীয় খণ্ডে সবসুদ্ধ আটটি বই সঙ্কলিত হল । এই বইগুলি লেখার সময়কাল, এপ্রিল তিয়াত্তর থেকে সেপ্টেম্বর তিরানব্বুই ; অর্থাৎ প্রায় কুড়ি বছর বিস্তৃত। উনিশশ তিয়াত্তরের এপ্রিলে ঋজুদার প্রথম বই, “ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে” প্রকাশিত হয়েছিল ।
বনে-জঙ্গলে নানা আধিভৌতিক ঘটনাই ঘটে, যে সব আলো-ঝলমল শহরে বসে বিশ্বাস না করলেও চলে। জঙ্গলে বসেও যে বিশ্বাস করি, এমনও নয় । কিন্তু এ কথাও সত্যি যে নানা আশ্চর্য ও অবিশ্বাস্য ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় শিকারী মাত্রকেই । জিম করবেট-এর বই যারা পড়েছ, তারাই “টেম্পল টাইগারের” কথা জানো । “ম্যানইটার অফ কুমায়ূনে” শাদার গিরিখাতে রাত কাটানোর সময়কার অলৌকিক আলোর বর্ণনা বা এর “থক”-এর মানুষখেকো বাঘ মারতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা ওঁর হয়েছিল সে কথাও নিশ্চয়ই তোমরা জানো ।
অনেকে বলেন, যে-লেখা, কিশোর-কিশোরীরা পড়বে, সেই সব লেখাতে এমন অতিপ্রাকৃত ঘটনা রাখা উচিত নয় । আমার কিন্তু মনে হয় যে, শিকারী ও বনচারীর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যা থাকে, তা তোমাদের কাছেই উপুড় করে দেওয়াই ভাল । আজকালকার কিশোর-কিশোরীরা আমাদের চেয়ে অনেকই বেশি বুদ্ধি ধরো । গ্রহণ-বর্জন যতটুকু করার, তা তোমাদের নিজেদেরই করা ভাল । যতটুকু বিশ্বাস করার করবে, যতটুকু ফেলে দেবার ফেলে দেবে । ‘মউলির রাত' গল্পটি, অস্বীকার করব না ; ছেলেবেলায় পড়া উত্তর আমেরিকার পটভূমিতে লেখা অ্যালগারনন ব্ল্যাকউড-এর একটি MOOSE শিকারের গল্প এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “আরণ্যক”-এ উল্লিখিত বুনোমোষেদের দেবতা “টেড়েবারোর” দ্বারা প্রভাবিত ।
পৃথিবীবিখ্যাত হাতি-বিশেষজ্ঞ প্রকৃতীশ চন্দ্র বড়ুয়ার (লালজী), মুখে হাতিদের বনদেবী ‘সাহানিয়া দেবীর কথা শুনেছিলাম। সাহানীয়া দেবীর সঙ্গে নাকি লালজীর দেখা হয়েছিল একবার। অল্পবয়সী নেপালি মেয়ে কথা বলেন না, শুধুই হাসেন।
লালজীকে নিয়ে পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্যর লেখা একটি চমৎকার বই আছে “হাতির সঙ্গে পঞ্চাশ বছর” । ভারতীয় বুনো-হাতি সম্বন্ধে এবং লালজী সম্বন্ধে যাদের ঔৎসুক্য আছে, তারা ঐ বইটি পড়তে পারো। আফ্রিকান হাতি যদিও ভারতীয় 'হাতির চেয়ে অনেকই বড় হয় কিন্তু স্বদেশী হাতি আমার বেশি প্রিয় । তবে আফ্রিকান হাতির একটি গুণ আছে ! তারা কোনওদিনই পোষ মানে না। পোষ মানাতে গেলে, না খেয়ে মরে যায় ।
ঋজুদা'র সব বইই আমার প্রিয়। তবে এই খণ্ডে সঙ্কলিত বইগুলির মধ্যে বেশি প্রিয় “বাঘের মাংস” এবং “অন্য শিকার” । কারণ, ঐ দুটিতে গল্পকে ছাপিয়ে গভীরতর কিছু বলার চেষ্টা করেছি। পেরেছি কি না, সে বিচার তোমরাই করবে । তোমাদের প্রত্যেককে নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে, তোমাদের প্রীতিধন্য ।