বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, তার উত্থান এবং পতন, মহাকালের দুর্গম বন্ধুর পথ ধরে এগিয়ে চলে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়াটা এক চরম আত্মবলিদান, কান্না, ভয়াবহ মৃত্যু, শাসকের বর্বরতা ও বাঙালী জাতির আশার আলোর ইতিহাস।
আমি যখন হলদিয়া পেট্রো-কেমিক্যালসের সহকর্মী বিভাসের লেখা 'মুক্তির যুদ্ধ, যুদ্ধেই মুক্তি' বইখানি হাতে পাই তখন খুবই উৎসাহিত ও আনন্দিত হই। আমি শ্রী রায় চৌধুরীর লেখা পূর্বের দুই খানি বই পড়েছি। আমি নিশ্চিত যে এই বইটিও আগের দুটি বইয়ের মতোই জনপ্রিয়তা লাভ করবে।
এই বইটি বিভাস ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধ, তার ইতিহাস, যুদ্ধের পরিকল্পনা, গরীবপুর, হিলী, ব্যারাকপুর, সিলেট, ঢাকা ইত্যাদি জায়গার যুদ্ধের বর্ণনা ও যুদ্ধ জয়ের ঘটনার ব্যাখ্যা করে লিখেছেন।
আমি বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় নাশানাল ডিফেনস অ্যাকাডেমির (N.D.A) ক্যাডেট হিসাবে সমর শিক্ষা নিচ্ছিলাম। এই যুদ্ধে অংশ না নিলেও, আমি এই যুদ্ধের গতি প্রকৃতিকে বিশেষ ভাবে অধ্যয়ন করেছি। কারণ, ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ একটা দেশের ইতিহাস বদলের ঘটনা। আর একজন সমর শিক্ষানবিস হিসাবে আমাদের শিক্ষার উৎস।
'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ' এই বিষয়কে একটা ছোট বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসা, তাকে ব্যাখ্যা করা একটা বিরাট ধৈর্য্য, গভীর অনুসন্ধান ও পাণ্ড্যিত্বের কাজ। এই ব্যাপারে প্রাক্তন বায়ুসেনা বিভাস রায় চৌধুরীর পরিশ্রম খুবই সার্থক হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলা ভাষায় যুদ্ধের বই লেখা বিশেষ অধ্যাবসায়ের কাজ, কারণ বেশিরভাগ শব্দের বাংলা অর্থ পাওয়া অসুবিধাজনক। সেইদিক থেকে 'মুক্তির যুদ্ধ, যুদ্ধেই মুক্তি' বইটি যুদ্ধের অংশগুলিকে পাঠকের সামনে বিশেষ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে হয়। যার ফলে আমার পক্ষেও বইটি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পড়তে কোনও অসুবিধা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে এই বইটি পড়তে পড়তে আমিও বেশ কয়েকটি নতুন তথ্য এই যুদ্ধ সম্বন্ধে জানতে পেরেছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে শ্রী বিভাস রায় চৌধুরীর লেখা 'মুক্তির যুদ্ধ, যুদ্ধেই মুক্তি' বইটি বাংলা পাঠক সমাজ আগ্রহের সাথে গ্রহণ করবেন এবং বাংলা সাহিত্যের এই দিকটি সুদৃঢ় হবে।