ভালোবাসার প্রহসন
—মাস্টার হুসাইন
দরজায় কয়েকবার ঠোকা দেওয়ার পর কাজের মেয়ে রেখা দরজা খুলতেই দেখতে পেল কেউ একজন তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে; চুলগুলো এলোমেলো, পোশাকগুলো ময়লা জমাট বাধা, কতদিন যে পরিষ্কার করা হয়নি তার কোন ঠিক নেই, হাতে একটা পুরাতন ব্যাগ; মনে হয় ভিতরে তার ব্যবহার্য কয়েকটা পোশাক; হতে পারে কাজের লোক কিংবা পথের ফকির।
রেখা বলল, কে আপনি, এখানে কি চাই? লোকটা বলল, আমি জিসান; এতটাই ক্ষুধার্ত যে খাবার না পেলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যেতে পারি; রাতের বেঁচে যাওয়া কোন খাবার থাকলে বাঁচতে সহযোগিতা করুন– সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছুটা সময় বাঁচতে চাই।
জিসানের কথা শেষ হতে না হতেই রেখার পাশে এসে দাঁড়ালো একটা সুন্দরী মেয়ে, দেখে মনে হচ্ছে এ বাড়ির আদরের দুলালী। মেয়েটি শান্ত সাবলীল ভাবে বলল, আমাকে বিয়ে করবেন? পেট ভরে খেতে দেবো, কখনো ভিক্ষা করা লাগবে না; আমি একটা চাকরি করি, সেই বেতনেই আমাদের সংসারটা সুন্দর ভাবে চলে যাবে।
জিসান বলল, গতকাল সকাল, দুপুর না খেয়ে থাকার পর রাতে একটা কেক খেয়ে চায়ের দোকানে বেঞ্চের উপর শুয়ে থাকায় এতটাই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছি যে খাবার না পেলে অল্প সময়ের মধ্যে মারা যাবো; তার মানে জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়ানো
আমি এক পথের ফকির; বাঁচতে হলে এইমুহূর্তে খাবার প্রয়োজন, আর খাবার পেতে হলে আপনাকে বিয়ে করতে হবে, এটা আবার কোন পরীক্ষা?
পুরুষ শাসিত সমাজে, পুরুষেরা নারীদের তুলনায় কম নির্যাতিত হয় না; কিন্তু পুরুষেরা মান সম্মানের ভয়, সন্তানের ভবিষ্যৎ, তথা যথাযোগ্য আইন না থাকায় মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেনা; তাইতো মোমবাতির মত নিজে পুড়ে, অন্যকে আলোকিত করে, এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে এমনও অনেক কর্মকাণ্ড, যেগুলো পুরুষে করলে হয় নারী নির্যাতন; আর নারীরা করলে পুরুষ নির্যাতন না হয়ে, প্রেম বিলাসের খেতাব পায়।
ভালোবাসার প্রহসন উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা জিসান বার বার পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার ত্যাগ করে, পথের ফকির বেশে, বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে, জীবনের বেশ কিছুটা সময় পার করে। অপরদিকে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে থাকা এক কোটিপতির মেয়ে, “মায়া” পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে জিসানকে বিয়ে করতে বাধ্য করে; কিন্তু বিয়েটা সহজে হলেও সংসার জীবন শুরু করতে সময় লেগে যায়; কেননা প্রেমিক পুরুষ জিসান ছলনার আশ্রয় না নিয়ে প্রথমেই জানিয়ে দেয় সে বিবাহিত, ফলে মায়ার শুরু হয় মানুষিক যন্ত্রণা।
ভালোবাসার প্রহসন উপন্যাসে একজন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কেমন হওয়া উচিত, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, দুষ্ট মিষ্টি প্রেমের এই উপন্যাসটি পাঠক-পাঠিকাদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবে।