আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে 'অণুর বই লিখে প্রায় চমকে দিয়েছিলেন শিবতোষ মুখোপাধ্যায়। বিজ্ঞান নিয়েও বাংলা ভাষায় যে কত সহজ, স্বচ্ছন্দ ও সরস ভঙ্গিতে আলোচনা করা যায়, তারই এক পরম বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত হয়ে যেন দেখা দিয়েছিল এই বইটি-যার বিষয়: অ্যামিবা থেকে অ্যাটম পর্যন্ত সৃষ্টিবিবর্তন। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বৈজ্ঞানিক ভূমিকায় বাহবা জানিয়েছিলেন তরুণ লেখককে, সাহিত্যিক মুজতবা আলির মতো রসজ্ঞ পাঠিয়েছিলেন তারিফ জানানো চিঠি। শিবতোষ মুখোপাধ্যায় নিজেও বিজ্ঞানের স্বনামধন্য অধ্যাপক। কিন্তু মাতৃভাষা সম্পর্কে তাঁর দুর্বলতা ছিল অকৃত্রিম। বিজ্ঞানের দুরূহ নানান বিষয় নিয়ে বাংলা ভাষায় অসামান্য কিছু আলোচনার নমুনা রেখে গেছেন তাঁর একাধিক গ্রন্থে। কৌতুকস্নিগ্ধ তাঁর বর্ণনা, সাবলীল তাঁর ভাষা, প্রাঞ্জল আলোচনাভঙ্গি। গভীর তবু স্বাদু, সতথ্য তবু সুরম্য। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণ বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে তৈরি করেছে অপূরণীয় শূন্যতা। এহেন শিবতোষ মুখোপাধ্যায়ের এতকাল-অগ্রন্থিত প্রায় পঞ্চাশটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাহিত্যরচনাকে দুই মলাটের মধ্যে এনে প্রকাশ করা হল এই নতুন গ্রন্থ, 'অ্যারিস্টটলের লণ্ঠন'। ভৌতবিজ্ঞান থেকে শারীরবিজ্ঞান, সৌরবিজ্ঞান থেকে প্রাণীবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান থেকে ভূবিজ্ঞান-বিজ্ঞানের এমনতর বিভিন্ন শাখার হরেক বিষয় নিয়ে এ-বইয়ের একেকটি অনন্য প্রবন্ধ। বিজ্ঞানের তত্ত্ব, সাহিত্যের আনন্দ আর দর্শনের উপলব্ধির এক অনবদ্য মিশেল প্রতিটি লেখাকে করে তুলেছে স্বতন্ত্র ও স্বমহিম। পাঠককে করে রাখবে আদ্যন্ত আবিষ্ট, সম্মোহিত।