বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক স্রষ্টা ফজলুল হক মিলন কবিতা, কিশোর কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধে তাঁর স্বকীয় মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন। তাঁর সৃজনধারা যেমন বহুমাত্রিক, তেমনি হৃদয়ের গভীরতা থেকে উঠে আসা। সর্বমোট বারোটি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে গেছে তাঁর সাহিত্যভুবনে, যা প্রমাণ করে তিনি এক নিরন্তর সৃষ্টিশীল লেখক।
“মেঘের মিনার ভাঙে প্রজাপতি মন” গল্পগ্রন্থে লেখক পাঠকদের জন্য এনেছেন বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার সমাহার। প্রতিটি গল্পের নামকরণ, প্রেক্ষাপট ও বিষয়বৈচিত্র্যে আমরা পাই জীবনঘনিষ্ঠতা ও শিল্পিত উপস্থাপনার এক অনন্য রূপ। এখানে প্রেম ও বিরহ, আনন্দ ও বিষাদ, শহর ও প্রকৃতি—সবকিছুর এক অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটেছে।
লেখকের গল্প বলার ঢং সহজ, কাব্যময় এবং ভীষণ প্রাণবন্ত। কখনো উত্তম পুরুষের বয়ান, কখনোবা তৃতীয় পুরুষের নিরপেক্ষ ভঙ্গি—দুটি ধারা মিলেমিশে গল্পগুলোকে করেছে আকর্ষণীয়। প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবনের সম্পর্ক তাঁর গল্পে এতটা নিবিড়ভাবে উঠে আসে যে মনে হয় প্রকৃতি তাঁর কলমের প্রেরণা ও অন্তরঙ্গ সঙ্গী।
“বুনো বসন্তে নীল কষ্ট”, “ডাকাতিয়া প্রেম”, “অতন্দ্রিলার প্রথম পুরুষ” কিংবা “সূতোয় বাঁধা প্রজাপতি”—সব গল্পেই খুঁজে পাওয়া যায় মানুষের অন্তর্লোকের বেদনাভরা সুর, আবার পাশাপাশি থাকে আশার আলো। ফলে এ গ্রন্থ শুধু গল্প নয়, বরং মানুষের মনের গভীর যাত্রারও এক বর্ণিল দলিল।
সব মিলিয়ে “মেঘের মিনার ভাঙে প্রজাপতি মন” শুধু একটি গল্পগ্রন্থ নয়; এটি জীবন, প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কের অনন্য কাব্যময় রূপায়ণ—যেখানে প্রতিটি গল্প পাঠককে স্পর্শ করবে ভিন্ন ভিন্ন আবেগে, ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতায়।
ফজলুল হক মিলন সময়ের একজন সাহসী ছড়াকার। শুধু একজন ছড়াকারই নন, একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, রম্য লেখক, সাহিত্য সমালোচক, সাংবাদিক ও সাহিত্যের অধ্যাপক। জন্ম ১ ডিসেম্বর নরসিংদী জেলার মাধবদীস্থ নওপাড়া গ্রামে। পিতা মরহুম হাফিজ উদ্দীন প্রধান এবং মাতা মরহুমা হাজী মোসাম্মৎ ফিরোজা বেগম। শিক্ষা জীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ভাষা সাহিত্যে সম্মান সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৫ সালে। ছোট বেলা থেকেই সাহিত্যের সাথে জড়িত। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে সাপ্তাহিক খোরাক পত্রিকায়। সেই থেকে শুরু। অদ্যবধি নিরলস ভাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে আসছেন। লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে, সাপ্তাহিকে এবং লিটল ম্যাগে। এযাবৎ তার তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে 'ভ্যানেটি ব্যাগে তুমি কার ব্যথা রাখো' কাব্যগ্রন্থ (২০০৫) তারপর ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় সময়ের দুঃসাহসী ছড়াগ্রন্থ 'ফাটাফাটি ছড়া' এবং 'তারায় তারায় লুকোচুরি' নামে একটি কিশোর কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। তাছাড়া সম্পাদনা করেছেন দু'টি কাব্য গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ রয়েছে সাতটিরও বেশী। ২০০৭ সালে একটি জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস 'স্বীকৃতি' দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পাদনা করছেন শিল্প সাহিত্যের কাগজ 'বুনন'। আর এরই স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে কাব্যকথা জাতীয় সাহিত্য পদক লাভ করেন।