বেশিরভাগ ভারতীয় চিন্তাবিদরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং একান্তভাবে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত সংস্কৃতি হিসেবে মান্যতাদানের পক্ষপাতী। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি দিয়ে বলেন যে, সংস্কৃতি হলো শ্রুতি বা বেদচতুষ্টয় এবং বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরাই এর একমাত্র ধারক ও বাহক। কিন্তু ইতিবৃত্ত আলোচনা করলে আমরা লক্ষ করি যে, প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের মানব প্রজাতি ভারতবর্ষে এসেছে। এদের কেউ এসেছেন দিগি¦জয়ী অভিযানকারী হিসেবে, কেউ এসেছেন কেবল জীবিকার সন্ধানে, কেউ এসেছেন বণিকরূপে, আবার কেউবা এসেছেন ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে। এদের অনেকে স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে বসবাসও স্থাপন করেছেন। এর ফলে অতি স্বাভাবিক ও সক্সগত কারণেই তাদের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা, ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবনাচরণের প্রভাব অন্যান্য ভারতবাসীর ওপর পড়েছে।
তাইজন্য ভারতীয় সংস্কৃতিও তাদের প্রভাবে স্নাত হয়েছে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও গবেষক ডক্টর তারা চাঁদ নির্মোহ দৃষ্টিতে তাঁর কালজয়ী Influence of Islam on Indian Culture শীর্ষক গ্রন্থে এই সত্যটাই তুলে ধরেছেন। মোট ১৩টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করে যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য উপন্যস্ত করেছেন। ভারতীয় সংস্কৃতির নিজস্ব মৌলিকতা ও অনন্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশে ইসলাম ধর্ম যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে, বস্তুনিষ্ঠভাবে তিনি এ সত্য প্রতিপন্ন করে ঐতিহাসিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন আলোচিত গ্রন্থে। গ্রন্থটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রতি আদ্যতা দিয়েই আমরা এটি প্রকাশ করছি। এস. মুজিব উল্লাহ আলোচিত গ্রন্থটি প্রথম বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষাবাষীর নজরে আনেন। তাঁর এই অনূদিত গ্রন্থ বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। আমাদের বর্তমান গ্রন্থটি তাঁর এই অনূদিত গ্রন্থেরই নতুন উপস্থাপনা। সম্পাদনা করতে গিয়ে আমরা বর্তমান সংস্করণে পুরনো বাংলা বানান পরিহার করে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানান প্রয়োগ করেছি। সাধারণ পাঠক ও গবেষকবৃন্দ এতে যথেষ্ট উপকৃত হবেন বলে আমাদের স্থির ধারণা।