বহুদিন ধরে শিল্পসাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব তৈরি হয়েছে পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে। তাকেই আমরা শাশ্বত বলে ভাবতে শিখেছি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের সঙ্গে বহুবার সমাজ-সংগঠনের পরিবর্তন ঘটেছে; কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই নারীর বন্দিত্ব অপসারিত হয়নি-পিতৃতন্ত্র আরোপিত সত্যই হয়ে উঠেছে তার প্রশ্নাতীত নিয়তি। বিশ শতকে এসে নারী, পূর্ববর্তী শতকগুলোর অর্জিত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির ভিত্তিতে জগৎ ও জীবনকে নান্দনিক পুনর্মূল্যায়নের নতুন পথ আবিষ্কারে শিল্প ও সাহিত্যের দর্পণে নিজেদের প্রকৃত প্রতিবিম্ব দেখতে চাইলেন; সমালোচনার বদ্ধমূল ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে বিকল্প বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়াস পেলেন। মানব মুক্তির ধারণা যত প্রবীণতর হতে লাগল, নারীর স্বতন্ত্র ভাবনার পরিসরও সম্প্রসারিত হতে লাগল। ক্রমশ তার প্রতিবাদী নন্দনতত্ত্বে উঠে আসছে নারীর শিল্প-সাহিত্য-দর্শন-অভিজ্ঞান-তৈরি হচ্ছে বিকল্প দৃষ্টিকোণের সন্দর্ভ।
সাহিত্যে-শিল্পে যেহেতু লৈঙ্গিক নিরপেক্ষতা অকল্পনীয় তাই নারীর একান্ত নিজস্ব বয়ান যে ক্রমশ নারীবীক্ষার পর্যায়ক্রমিক প্রতিষ্ঠা ও উদ্ভাসনের মধ্য দিয়েই লক্ষ্যগোচর হতে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীকে তার অবগুণ্ঠন ভেঙে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মানবীজন্মের সেই আখ্যানই সাহিত্যে প্রকাশ হয়েছে।
বর্তমান বইটিতে পিতৃতন্ত্রের নিñিদ্র অচলায়তনের মধ্য থেকে সাহিত্যে নারীর নিজস্বতা নির্মাণের পথটি অনুসন্ধান করা হয়েছে। বইটিতে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নবজাগরণ-উত্তরকাল পর্যন্ত নারীর স্বরূপ যেমন চিহ্নিত হয়েছে তেমনি বর্তমান কালের সাহিত্যে নারীর সাবলীল উজ্জীবন বহুকৌণিক দৃষ্টিতে উপস্থাপিত হয়েছে।
জন্ম ১৯৮২, মেহেরপুর। নওয়াপাড়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকার পাঠ শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'সমরেশ বসুর উপন্যাস: মধ্যবিত্তজীবন' বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ পেয়ে 'কবিগান: সমাজপরিপ্রেক্ষিত ও রূপবৈচিত্র্য' শিরোনামে গবেষণা সম্পন্ন করেন। অনুসন্ধানী গবেষক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করলেও তাঁর অপার আগ্রহের বিষয় কথাসাহিত্য এবং বাংলার লোকজীবন ও লোকসাহিত্য। বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। আইবিএস জার্নাল, বাংলা গবেষণা পত্রিকা, সাহিত্য-গবেষণা পত্রিকা, সাহিত্য গবেষণাপত্র, সাহিত্য পত্রিকা, ঐতিহ্য, সাহিত্যসন্দর্ভ, ভাষা-সাহিত্য পাঠ, Journal of Islamic Education and Research, Journal of history and cultureসহ অনেক গবেষণা পত্রিকায় ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা বিষয়ে বহু প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।