আঠারো শতক। ভারতের ইতিহাসে শুরু হল এক নতুন যুগ— ব্রিটিশ উপনিবেশের যুগ। শাসন হাত পাল্টাল, বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হল, আর পাল্টাল অপরাধ জগতের ধরন-ধারণ। সময় মানুষকে করল জটিল, আর মানুষের অপরাধ হয়ে উঠল জটিলতর।
দু'শো বছর ধরে ভারতভূমির বুকে রাজত্ব করেছে ব্রিটিশ-শাসক। আর এই দু'শো বছর ধরে ভারতভূমির অপরাধ জগৎ বিবর্তিত হয়েছে বিচিত্রতর পন্থায়। ব্রিটিশ উপনিবেশের ছায়ায় বিস্তৃত হল অশুভতর এক উপনিবেশের ছায়া। অপরাধের উপনিবেশ, অন্ধকারের উপনিবেশ।
প্রদীপের নীচেই জমাট বাঁধে অন্ধকার। ঠিক সেভাবেই, সভ্যতার নানা রীতিনীতি আর প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অপরাধের বিস্তার ঘটেছে একেবারে শুরু থেকেই। বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ড হয়ে ওঠার পরেও তার অন্যথা হয়নি।
নতুন ধরনের আইন ও আদালত, পুলিশ নামক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব, নতুন প্রযুক্তি ও যোগাযোগ-ব্যবস্থা— এ-সবের সমান্তরালে নিজের চেহারা বদলেছিল অপরাধও। সমাজ ও অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, উপমহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত উপনিবেশে অন্ধকার দেখা দিয়েছিল নতুন রূপে।
তার মোকাবিলায় ঔপনিবেশিক আইন ও তার রক্ষাকর্তারাও দেখা দিয়েছিলেন নতুন রূপে— নতুন অস্ত্র ও আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে।
কেমন ছিল সেই সংঘাতের চেহারাটা? আলো আর কালোর এই বিভাজন কি সরল ছিল? নাকি তার পাত্রপাত্রীরা শিবির বদলও করেছেন সময়ের সঙ্গে, ইতিহাসের চোখে?
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েই গড়ে তোলা হল 'অন্ধকারের উপনিবেশ'। এ-বইতে সেই দুনিয়ার কিছু অদ্ভুত আখ্যান সংকলিত হয়েছে। এই আখ্যানগুলি কেবলমাত্র তৎকালীন অপরাধজগতের অদ্ভুত-অত্যাশ্চর্য কাহিনিই নয়— তৎকালীন সমাজ-সংসার-পরিস্থিতির চিত্তাকর্ষক দলিলও বটে।