হিমেল বরকতের ‘এক চিমটি হাসি: একালের রূপকথা’ গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মুখে কখনো ফুটে উঠবে মুচকি হাসি, কখনো কখনো তা অট্টহাাসিতেও রূপ নিতে পারে। কখনো রূদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, কখনো মিলবে রোমাঞ্চের ছোঁয়া। সবগুলো গল্পই শেষপর্যন্ত কোনো না কোনো গভীর বোধ পাঠকের মনে তৈরি করবে।
বইটি রূপকথার। রূপকথা, কারণ এখানে পশুপাখিরা মানুষের ভাষায় কথা বলে, তাদের হাস্যকর সব কাজকর্মেও আছে মানুষেরই জীবনের ছাপ। আছে যাদুকরী আয়না, আছে এমন কান ঢাকা টুপি যা পরলে অন্যের কথা আর বোঝা যাবে না। ভূতদের অদ্ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার গল্প যেমন মিলবে, তেমনি দেখা মিলবে খামখেয়ালি রাজা আর উচিত কথা বলা প্রজার সাথেও। কল্পনার এমন উদ্দাম ছোটাছুটি তো রূপকথাতেই মেলে।
কিন্তু সেকালের রূপকথা নয়, ‘এক চিমটি হাসি’ একেবারে একালের! এখানে হাজির তাই চারপাশের চেনা সব চরিত্র, চেনা সব ঘটনা। সবগুলো কাহিনী কাল্পনিক, কিন্তু আজগুবি নয় এক বর্ণও। গল্পগুলো অরণ্য ও প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখাবে, শেখাবে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে। ভুল ধরিয়ে দেয়া মানুষটি যে আসলে বন্ধু, জোর করে অন্যের ওপর সব কিছু চাপিয়ে দিলে যে পরিণাম ভালো হয় না, এমনি জরুরি সব ইঙ্গিতই মজার ছলে হিমেল বরকত বলে গিয়েছেন।
রূপকথার আবেদন চিরকালের, কিন্তু সব কালেই নতুন নতুন রূপকথা লেখা হচ্ছে। রূপকথার আসল আনন্দটা এইখানেই। সময় ছাপানো কিছু বার্তা পাঠককে দেয় বলেই রূপকথার কাছে সব বয়েসী মানুষ বারবার ফিরে আসে। কোনো রূপকথার বয়স হাজার হাজার বছর, কোনটি সদ্যমাত্র লেখা হলো আজকের হাসি-কান্না-ঠাট্টায়।
হিমেল বরকতের প্রয়াণের পর প্রকাশ পাওয়া ‘এক চিমটি হাসি’ রূপকথার জগতের তারা ভরা আকাশে যেনো আরেকটা ঝকমকে নক্ষত্রের জন্ম দিলো।
হিমেল বরকত। জন্মেছেন ২৭ জুলাই ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে, বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার অন্তর্ভুক্ত মিঠেখালি গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন মোংলার সেন্ট পলস হাই স্কুল, ঢাকার নটরডেম কলেজ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বাংলা ও বাংলাদেশের উপেক্ষিত, অনালোচিত কাব্য প্রসঙ্গ তার আগ্রহের ক্ষেত্র। কাজ করছেন বাংলাদেশের 'পথ-কবিতা' বিষয়ে। আদিবাসী কাব্য সংগ্রহেও নিয়োজিত আছেন দীর্ঘদিন থেকে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বাংলাদেশের কবিতায় উত্তর-ঔপনিবেশিক কণ্ঠস্বর' শীর্ষক গবেষণার জন্য ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ চোখে ও চৌদিকে (২০০১)। সম্পাদনা করেছেন দুই খণ্ডে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রচনাবলী (২০০৫), কবি ত্রিদিব দস্তিদারের কবিতাসমগ্র (২০০৫) ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১২)। প্রচ্ছদশিল্পী: আবদুস শাকুর-এর চিত্র অবলম্বনে