একটি উন্নয়নশীল ও ক্রমসমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কতৃক জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি খাতের ভূমিকার কথাও গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তি জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ ভাগ তরুণ এবং এ দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট ৬.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১.৩ বিলিয়ন মানুষের বয়স ১৫ থেকে ২৪ এর মধ্যে, যেটি পুরো জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। এদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ তরুণই উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক। তরুণদের মাঝে বেকারত্বের হার বয়স্কদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ এবং মোট বেকার জনগোষ্ঠীর ৪৪ শতাংশই তরুণ। আজকের তরুণ সমাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পরও বেকার থাকছে। চাকরির বাজারে নিজেকে উপযোগী করে প্রস্তুত করা, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস করা, আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ সমাজকে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিজের যোগ্যতাকে অনুধাবন করে নতুন কিছু শুরু করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শিক্ষিত বেকার তরুণরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা, যার আশু সমাধান জরুরি।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় Entrepreneurship বা উদ্যোক্তাবাদ’ একটু ঝুঁকিপূর্ণ, তবে স্বীকৃত ধারণা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষত একবিংশ শতাব্দীতে শিল্পকারখানা বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাগণ ধারাবাহিকভাবে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ রয়েছে। এদেশের শিক্ষিত তরুণদের অনেকের মধ্যেই উদ্ভাবনী শক্তি, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা, অর্থনৈতিক সুবিধাসমূহের বিষয়ে কার্যকরী উপলব্ধি, দৃঢ় প্রত্যয় এবং বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা রয়েছে। এ সকল তরুণ পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে অচিরেই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি চাকরির পদের জন্য ২ থেকে ৩ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে, যার মধ্যে মাত্র একজনকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু যারা চাকরিটি পান না, তারাও তো কম মেধাবী নন। এর মানে, যদি আমরা ব্যাপকহারে উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারি, তাহলে তারা চাকরির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবেন।
যেমনÑ আমেরিকা বা অন্যান্য উন্নত দেশে কর্মীর অভাব থাকায় তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয় সঠিক লোক খুঁজে বের করার জন্য। এমনকি এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগকারী ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থও আয় করে। অথচ আমাদের দেশে একটি বড়ো সমস্যা হলো, উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতার অভাব। ব্রিটিশ শাসনামলে আমাদের চাকরিজীবী (কেরানি) হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই মানসিকতা এখনও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজমান।
আমরা যদি ইউএসএ, ইউকে, সিঙ্গাপুর বা ইউরোপের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, তাদের মানসিকতা হলো কীভাবে কত বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়। তারা সমালোচনা বা সময় নষ্ট না করে কঠোর পরিশ্রম, মেধা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে নিজেদের, প্রতিষ্ঠান এবং দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে। আমাদেরও এ দিক থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পৃথিবীর তরুণ প্রজন্ম যখন উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চায়, বাংলাদেশে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে আমাদের তরুণদের একটা অংশ Non productive জায়গায় কাজ করার কারণে তখন হতাশাগ্রস্ত। ফলে সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা জরুরি। কেননা, একজন উদ্যোক্তাকে মূল্যায়ন করতে হবে তার আর্থিক অবস্থার মানদণ্ডে নয়; বরং তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার নিরিখে। তাদের সামান্য সহযোগিতার মাধ্যমে যে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব, তা সত্যি অবাক করার মতো।
আজকের বিশ্বে অনেক ধরনের অনানুষ্ঠানিক অথবা ঘরোয়া ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে বিভিন্ন ধারার দক্ষতাসম্পন্ন জনবল। এই বিশাল তরুণ সমাজ তাদের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে অভাবনীয় কিছু সৃষ্টি করতে পারে। কেবল সৃষ্টিশীলতার সাথে জ্ঞানের সংযোগ ঘটানোর অভাবে আমরা তাদের যথেষ্ট কর্মক্ষম করে তুলতে পারছি না। Venture Capital