বিষন্ন চিত্তে রেলের করিডর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা কেবিনে নজর পড়তেই আরিয়ান দেখতে পেল হেলান দিয়ে বসে আছে রেহানা, তবে এই রেহানা আর সেই রেহানার মধ্যে আসমান জমিন ব্যবধান; ছিপছিপে গড়নের সেই রেহানা হাড্ডিসার দশা থেকে মুক্তি পেয়ে মাদকতাপূর্ণ দেহের অধিকারী হয়েছে, চেহারায় ফুটে উঠেছে তার এক অন্যরকম লাবণ্যতা; অনিমেষ নয়নে অনন্তকাল চেয়ে থাকা যায় সেই চেহারার দিকে। পরিবার ফিরে পাওয়ার আনন্দে আরিয়ানের চোখ দুটো ছলছল করে উঠল, ছুটে এলো দরজার কাছে; কিন্তু ভিতরে তার প্রবেশ করা হলো না; রেহানার পাশে বসে হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিতে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে আরিয়ানের বয়সী এক যুবক, রেহানাও মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে আছে। মুহূর্তে আরিয়ানের চেহারাটা ফিকে হলো; শঙ্কায় সংকোচে পিছিয়ে এলো দু-পা, নিজেকে আড়াল করে রেহানার দিকে চেয়ে রইল। ঠিক কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়েছিল আরিয়ান তা বলতে পারবে না, তবে রেহানা ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে এসে যখন বলল, এতদিন কোথায় ছিলে, তখন আবেগে আপ্লুত আরিয়ান দ্রুত রেহানাকে এক পাশে সরিয়ে জড়িয়ে ধরল; কিন্তু রেহানার কোন সাড়া না পেয়ে ধীরে ধীরে বাহু-বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল, অনেক দেরি হয়ে গেছে তাইনা? আসলে আমার অপরাধের শাস্তি এমনই হওয়া উচিত ছিল। রেহানার চোখে এখন আর অশ্রু টলমল করে না, একটা সময় কাঁদতে কাঁদতে চোখের সেই অশ্রু ধারা হয়তো বিলীন হয়ে গেছে, সেখানে এখন আর নেই অপেক্ষার ছাপ; বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে মেয়েটি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরিয়ান আবার বলল, মনে হচ্ছে তোমার নতুন স্বামী তোমাকে অনেক কেয়ার করে, ভালবাসে; তাইতো আমার থেকে পাওয়া অবজ্ঞা, অবহেলা আর যন্ত্রণার ছাপ চোখের নিচে সেই কালো দাগ এখন আর নেই। কঙ্কালময় শুকনো সেই দেহে এখন মাংসের আনাগোনা, শুকনো খসখসে চেহারায় এখন তেজদীপ্ত লাবণ্যতা; মনে হয় হাজার বছর চেয়ে থাকি, কিন্তু আমি নিজেই সেই অধিকার হারিয়ে ফেলেছি।
আরিয়ানের মুখে নতুন স্বামী কথাটা শুনে রেহানা তার দিকে একবার তাকিয়ে নিরবে কেবিনের দিকে তাকালো, তারপর হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল অনেক সুখী রেখেছে আমায়। আরিয়ানের চেহারাটা ফিকে থেকে ফিকেতর হলো। রেহানা অনেক কষ্টে বেদনার ছাপ লুকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলল, তোমরা কেমন আছো, ফারিহা তোমায় অনেক ভালোবাসে তাই না? তোমরা সন্তান নিয়েছো?
আরিয়ান একটা অবজ্ঞার হাসি দিয়ে বলল, জেল থেকে বেরিয়ে আমার মোবাইলের সিমগুলো সব ভেঙে ফেলেছিলাম আর কখনোই যোগাযোগ করিনি ফারিহার সাথে, এমনকি আমি আমার নিজেকেই বিশ্বাস করি না তাইতো জীবনের সাথে আর কোন মেয়েকে জড়াইনি।
রেহানা আরিয়ানের বুকের কাছে শার্ট খেমছে ধরে বলল………
সময় এবং প্রকৃতি যখন কারো পক্ষে কাজ করে না তখন বাস্তবতা তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে; তবুও সততা এবং চরিত্র ঠিক রেখে যারা ধৈর্য ধারণ করতে পারে তারা সফলকামি। এক চিলতে হাসির জন্য উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা আরিয়ান সৎ এবং চরিত্রবান হওয়া সত্ত্বেও সময় এবং প্রকৃতির বিমুখতাই মিথ্যে কলঙ্ক তার নিত্য সঙ্গী; তবুও ধৈর্য এবং সততা তাকে নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চিনতে শেখায় প্রকৃত আপন মানুষগুলো এবং পৌঁছে যায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
আশা করি লেখাটি– বাস্তবতা, রোমান্টিকতা এবং সাহিত্য কর্ম দিয়ে পাঠকের মনোরঞ্জন করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। পড়ার সময় কারো কারো চোখে অশ্রু টলোমলো করলেও গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম, কেননা পদে পদে রয়েছে দুঃখ এবং আনন্দের সংমিশ্রণ যা পাঠককে বেশি আকর্ষণ করবে।