একজন শরণার্থীর অদম্য চেতনা, স্থিতিস্থাপকতা, সেবা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের একটি অসাধারণ জীবন তাঁর।
ইমরানের বাবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট অঞ্চলে নিপীড়ক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম জেগে উঠেছিলেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় এবং সংকল্পের সাথে স্বাধীনতার জন্য দায়িত্ব পালনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দুঃখজনকভাবে, তাঁর ১৭ বছর বয়সী ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শাহাদাত বরণ করেন। এটি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অন্বেষণে অসংখ্য পরিবারের ত্যাগের একটি মর্মস্পর্শী অনুস্মারক।
যুদ্ধের বিজয়ের পর ইমরান চৌধুরী তাঁর পিতা ও ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্বতন্ত্রতার সাথে জাতির সেবা চালিয়ে যান। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিয়মিত কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দেশের প্রতি তাঁর উৎসর্গ ছিল অটুট এবং এর প্রতিরক্ষায় অবদান ছিল প্রশংসনীয়। একজন লেফটেন্যান্ট হিসেবে একটি আর্মি স্কুলের প্রশিক্ষক হওয়াটা ছিল তাঁর সামরিক পেশার সবচেয়ে উৎকৃষ্টতার উদাহরণ।
বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইমরান পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। তিনি স্বদেশ থেকে দূরে থাকলেও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার শিখাকে ম্লান হতে দেননি। তিনি যুক্তরাজ্যের মধ্যে বহুমুখী জনহিতৈষী, মানবতাবাদ এবং দাতব্য কাজ শুরু করেন। ইমরান চৌধুরী বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য আশার আলো হয়ে ওঠেন। তিনি তাদের নতুন আবাসনে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রবাসী সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাঁর উৎসর্গ তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের সীমানা ছাড়িয়ে প্রসারিত হয়েছে।
ইমরানের কণ্ঠ তাঁর টেলিভিশন, রেডিও এবং লেখালেখির মাধ্যমে বহুদূরে পৌঁছেছে। তিনি ইতিহাস, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রগুলোকে গভীরভাবে আবিষ্কার করেছেন। এই ক্ষেত্রে তিনি একজন সম্মানিত বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠেছেন। তাঁর লেখা গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং বিষয়গুলোর গভীর উপলব্ধি দ্বারা প্রভাবিত। আর এগুলো অগণিত মনকে আলোকিত করেছে।
ইমরান চৌধুরীকে সমাজে তাঁর ব্যতিক্রমী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে মহামান্য রানী কর্তৃক ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পদক (BEM) প্রদান করা হয়েছে। এটি তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং বিশ্বের উন্নতির জন্য অটল উৎসর্গের উপযুক্ত স্বীকৃতি ছিল।
নিজের দেখা মুক্তিযুদ্ধ, শরণার্থী জীবন নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যার ইতিহাস’।
লেফটেন্যান্ট ইমরান আহমেদ চৌধুরী বিইএম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসুরী। ১৯৭১ সাল ছিল তাঁর শৈশবের দূরন্ত দিন। সেই দিনগুলোতে তিনি নিজ জন্মভূমিকে ধ্বংসকারী সংঘাতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শরণার্থী হিসেবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন তাঁর সহোদর।