কবি কেন কবিতা লেখেন? কোন মানসে তাঁর কলমের আঁচড়ে লিখনী আসে! কোন যাতনায় কিংবা কোন রসবোধে-কোনোরূপ ভনিতা না করে অকপটে বলে দিয়েছেন কবিতায়। মজার বিষয় হচ্ছে আমার সাথে পরিচয়সূত্রে জানি, তিনি অজস্র কবিতার বই পাঠ করেন এবং অসংখ্য কবিতা লেখেন; কিন্তু নিজেকে কবি হিসেবে প্রকাশ করেন না। আজ সে ধারণা পুরোপুরি হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে সরাসরি এলেন কবিতার বইয়ের ছাপাখানায়।
ফেসবুক নামের ভার্চুয়াল জগতে কবির দখলদারিত্ব ও পদচারণায় বিস্মিত হয়েছি এতদিন। আজ বাস্তবে প্রতিফলন ও চমক দেখছি মুগ্ধতার সঙ্গে।
সূচনাকে ভালোবেসে কবি দুর্দান্ত প্রেমতৃষ্ণা বুকে নিয়ে বলতে চেয়েছেন ফিরে এসো আমার বিশুদ্ধ ভালোবাসায়, ভালোবাসার উষ্ণতায়। হৃদয়ে লুকানো গোপন ব্যথাগুলো হতাশার নীল বেদনা হয়ে বুকে তৃষ্ণার আগুনে জ্বলেছেন প্রতিনিয়ত। প্রেমিকার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনে গুনে নিরাশার অতলে তলিয়ে গেছেন; কারণ ভালোবাসা ফেরারি হয়েছে ও পরিযায়ী প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেছে দূরে। তাই অন্তর পোড়ে অনল দহনে, সেই দহন বন্ধ করতে বিরহী গোপন কথাটুকু রহস্যময় পৃথিবীর নির্জন কোণে পৃথিবীর কাছে কানে কানে বলতে চেয়েছেন 'সে কথা'।
মৃত্যুর পাথারে কত শত নিষ্পাপ প্রাণের ক্ষয় কাব্য উক্তির মাধ্যমে কবি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং যে কোনো অপঘাতে মৃত্যুকে তিনি ধিক্কার করেছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল, বন্যা, অতিখরা, অতিবৃষ্টিকে প্রকৃতির নির্মম খেলা হিসেবে তুলনা করেছেন এবং বর্তমান পৃথিবী বার্ধক্যের কবলে বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি পরিবারে দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়োগান্ত ঘটনায় কবি অত্যন্ত শোকাহত ও ব্যথিত হৃদয়ে-'ব্যথার আঁচড়' ও 'তোর স্মরণে' কবিতা দুটি লিখে স্মৃতিতে স্মরণীয় করে রেখেছেন।
কবির বিশ্বাস কোনো এক শিশিরভেজা ভোরে নগ্নপায়ে নিম্নণ-নূপুর বাজিয়ে প্রেমিকা সূচনা ফিরে আসবে, সে জন্য এ কাব্য গ্রন্থটিকে প্রেমিকার উদ্দেশে ডায়েরি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শুধু তুমি তোমার জন্য এই ডায়েরিটা-পড়ে নিও/কোনো একদিন মনখারাপের বিকেলে।
কবিতা মনের কথা বলে- এই বোধ ও বিশ্বাসে কবিতার প্রতি অনুরক্ত হয়ে ব্যবসায়ের পাশাপাশি নতুন নতুন কবিতার বই পাঠ ও নিজের লিখনীকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করেছেন। জীবনানন্দ, কবি নজরুল ও সৈয়দ শামসুল হক দ্বারা প্রভাবিত কবি মনের কথাগুলো কবিতার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে। মনের অনুভূতি-স্পন্দন, চিন্তার গভীরতা আর জীবনের রং-রূপে। তাই শব্দের খেলায় জীবন এঁকেছেন নিপুণ হাতে আবার আবেগের স্রোতে ভেসেছেন। অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় কাব্যিক ছন্দে উপস্থাপন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অসমাপ্ত আলাপন'। জন্ম: ৩ জানুয়ারি ১৯৬৬, রংপুর। শিক্ষা: স্নাতকোত্তর। ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অদ্যাবধি তাঁর সম্পাদনায় অসংখ্য স্মরণিকা, সাহিত্য ম্যাগাজিন ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। সেই সব জার্নালে কবিতা, ছোটগল্প, অণুকবিতা, ছড়া ও জীবনীমূলক রচনা লিখেছেন। সমাজ সচেতনতায় তিনি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন পদস্থ হয়ে আছেন। দৈনিক ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তার কিছু সংখ্যক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।