‘রহস্যঘেরা বিস্ময় বালক’ উপন্যাসটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা হয়েছে। গতানুগতিক উপন্যাস থেকে এর কাহিনিবিন্যাস, চরিত্র চিত্রায়ন, সংলাপ, আবহ, পটভূমি এবং রচনাশৈলীর মধ্যে ভিন্নমাত্রা সংযোজন করা হয়েছে। এখানে দুইশত বছরের পরাধীন একটা জাতিসত্ত্বার মানুষদের স্বাধীনতাস্পৃহা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, দেশের সকল নাগরিক যে যেভাবে পেরেছে দেশের স্বাধীনতার জন্য, দেশকে ঊপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেনি, ভয় পায়নি। স্বদেশির নামে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে দেশে থেকে, কিংবা বিদেশে গিয়ে।
সব পর্যায়ের মানুষ যখন স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যস্ত তখন এক দম্পতিকে নিজ সন্তানদের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করার পরিকল্পনা প্রণয়ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গিয়েছে। দম্পতি অধ্যাপনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াকেই তারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দুই মেয়েকে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকের নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন। আর মেয়েদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত করিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল তারা মেধা ও বিপ্লবী তৈরি করে দেশের কাজে লাগাবেন। আর মেয়ের জামাইরা ব্রিটিশ প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
একমাত্র মেধাবী ছেলেকে মাদ্রাজভিত্তিক প্রাথমিক স্কুল পাশ করিয়ে লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মূলধারায় প্রবেশের প্রয়াশ চালাবেন। পরবর্তীতে ঐ ছেলে ব্রিটিশ আন্তসাম্রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হয় এবং ঐ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ব্রিটিশ নাগরিক তরুণীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দেশের প্রতি, ধর্মের প্রতি, বিশেষ করে ভারতের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় সাহায্যকারী হিসেবে পাশে পেয়েছিল। এই দম্পতির গর্ভে জন্ম হয় ‘রহস্যঘেরা বিস্ময় বালক’-এর। সকল ধর্মের প্রতি অনুরক্ত এবং স্রষ্টার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী এই মহিয়সী নারী এই ‘রহস্যঘেরা বিস্ময় বালক’-কে গর্ভে ধারণ করে বিস্ময়কর সব কর্মকাণ্ড অনুধাবন করেন। এই দম্পতি এবং তাদের ‘রহস্যঘেরা বিস্ময় বালক’ গর্ভে থাকা অবস্থায় ও তৎপরবর্তীতে যেসব ঘটনা ঘটিয়েছিল তারও লোমহর্ষক কাহিনি এই উপন্যাসে বিবৃত করা হয়েছে।
মোঃ মজিবুর রহমান ১৩ ডিসেম্বর ১৯৫৭ ইং সালে জামালপুর জেলার সদর উপজেলায় (তুলসীপুর গ্রামে) জন্মগ্রহণ করেন। জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন কৃতি ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে সাহিত্য অনুরাগী এবং লেখালেখি তথা সাহিত্যচর্চা অব্যহত ছিল। এটা তাঁর লেখা ও প্রকাশিত চতুর্থ গ্রন্থ। প্রথম গ্রন্থ 'সংকট ও সংগ্রামের ইতিকথা'। এই গ্রন্থটি প্রকাশনার মধ্য দিয়েই তাঁর সাহিত্য অঙ্গনে প্রত্যক্ষভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁর মানসম্পন্ন এবং সৃজনশীল লিখনি তাঁকে বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে সুপরিচিত ও পাঠকপ্রিয়তা অর্জনে সহায়ক হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪-এ তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'ভালোবাসার রূপলাবণ্য ও 'গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপ্রকৃতি' এবং গল্পগ্রন্থ 'অন্যরকম অনুভূতি' প্রকাশিত হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি একজন ব্যাংকার ছিলেন। সরকারি এবং বেসরকারি একাধিক ব্যাংকে চাকরি করেছেন। স্বেচ্ছা অবসরগ্রহণান্তে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে 'ব্যবস্থাপনা পরিচালক'-এর দায়িত্ব পালন করেছেন ।