মুহাম্মদ সেলিমের এই বইটিকে বলা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার গভীরতা অন্বেষণের যাত্রা। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় সীমান্তের রহস্যময় অঞ্চল ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটি মাদক পাচার আর বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু।
লেখক পেশাদার সাংবাদিক। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ত্রিকোণাকার ভূখণ্ডটি কীভাবে এক অন্ধকার জগৎ হয়ে উঠেছে, তিনি নৈপুণ্যের সঙ্গে তা ফুটিয়ে তুলেছেন।
বইটিতে আছে দশটি অধ্যায়। প্রতিটি অধ্যায়ই চিন্তা উদ্রেককারী। এর মধ্যে তিনটি অধ্যায় পাঠকচিন্তকে ঝাঁকুনি দেওয়ার যোগ্য। ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের বাংলাদেশ অংশ’ অধ্যায়ে দেখা যায়, ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলটি মাদক উৎপাদনের উপযুক্ত। উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণ বলে দেয়, কীভাবে এই অঞ্চলে পপি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কীভাবে এই অঞ্চলটি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট এবং কেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘রাখাইন রাজ্যে নতুন সমীকরণ’ অংশে বর্ণিত আরাকান আর্মির উত্থান আর রাখাইন রাজ্যের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো। এখানে আছে আরাকান আর্মির এই উত্থান এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা কেমন করে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তার বর্ণনা, আছে সংঘাতের কারণে তৈরি হওয়া মানবিক সংকট এবং এতে করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীপ্রবাহ বৃদ্ধির আশঙ্কার বিষয়টিও।
‘রোহিঙ্গা কারা’ অধ্যায়ে রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিক পরিচয়, তাদের ওপর যুগ যুগ ধরে চলা নির্যাতন এবং তাদের বর্তমান দুরবস্থার এক মর্মস্পর্শী চিত্র রয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন যে এই সংগঠনগুলোর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এবং মিয়ানমার সরকারের দমননীতি কীভাবে এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতাকে জিইয়ে রেখেছে।
বইটিতে সংযোজিত বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার, মাদক সমস্যা এবং সমস্যাটি মোচনে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও বইটিতে যুক্ত করা বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন বাংলাদেশের মাদকের বাজারের ভয়াবহ চিত্র এবং ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল থেকে আসা মাদকের প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।