ইতোপূর্বে জীবনানন্দ দাশ বলে গেছেন, ‘যারা অন্ধ চোখে আজ বেশি দেখে তারা, পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’ নাবারুণ ভট্টাচার্যের ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’ বা আসাদ চৌধুরীর ‘সত্য কোথায়’ কবিতাসমূহে সমাজপতিদের মুখোশ খুলে গেছে। সম্প্রতি রেহমান সোবহান গত ১৫ বছরের পার্লামেন্ট সম্পর্কে প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘পার্লামেন্ট এখন ক্রোনি ক্যাপিটেলিস্টদের চেম্বার অব কমার্সে পরিণত হয়েছে। অপরাধবোধকে আমরা এখন সেবা হিসেবে ক্রয় করছি। অপরাধ অবৈধ সম্পদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সানন্দে সহাবস্থান করছে।’
কবি, কথাকার ও সাংবাদিক শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর দ্বিচারিতা কাব্যগ্রন্থে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিফলন ঘটেছে। তার একটি পদ্য প্রদর্শনী দিচ্ছি।
সবার চোখে সমাজসেবক
বাস্তবে স্মাগলার
চোরাচালান জালিয়াতিতে সিদ্ধ হস্ত
দেশজুড়ে চোরাকারবার।
১৯৭২ সালে আমার শিক্ষক নাট্যাচার্য মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ‘বর্ণচোর’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। ২০২৫ সালে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী লিখেছেনÑ
পরের দুঃখ তার হাসির কারণ
সুখে সে বিভোর
নিজের স্বার্থে বানায় গল্প
নাম তার বর্ণচোর।
দ্বিচারিতা কাব্যগ্রন্থের একটি অংশ ২০২৪-এর জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানের এলিজি রচনা। সমগ্র দেশের দেয়ালে দেয়ালে লেখা বিপ্লব বিদ্রোহের গ্রাফিতির সাথে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর নাম সংযুক্ত হলো। এটি তার কর্তব্য কৃতিত্ব দুটোই।
লাশের বাড়ি কই, পাদানিতে স্বপ্নের মৃত্যু তার শ্রেষ্ঠ কবিতা।
সময়ের পরিক্রমায় বদলায় ক্ষমতার দখল
হয় না কেবল মজলুম জনতার ভাগ্য বদল
মুগ্ধকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘পানি লাগবে পানি’ এখন আসাদের শার্টের মতো জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
বজ্র কণ্ঠে রাজপথে চলছে মিছিল
ক্লান্তি গেছে উবে যেন বিজয়ের হাতছানি
মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে মুগ্ধ বলছে
পানি লাগবে পানি?
১৬ জুলাই চট্টগ্রামে ওয়াসিমের বলিদান সম্পর্কে লিখেছেনÑ
জোসনা বেগমের আজও কানে বাজে
১৭ই জুলাই ওয়াসিম ফিরবে বাড়ি
কক্সবাজারের পেকুয়ায় ফিরেছে তবে
জীবন্ত নয় ছেলের লাশবাহী গাড়ি।