দফায় বিদেশ ভ্রমণ সত্যিই চমকে দিয়েছে, ভাবনায় ছাপ ফেলেছে। নতুন কোন দেশে গেলে মন সজাগ হয়ে উঠেছে, দশ ইন্দ্রিয় জেগে উঠেছে। জীবনের নব আনন্দের জানালা খুলে গেছে। বিচিত্র স্বাদের জীবন জগৎ বোঝার জন্য নিজের কৌতূহলী মনকে ছুটি দেইনি। চোখ, কান খোলা রেখেছি। কাজের শেষে প্রতিদিন নিত্যনতুন রাস্তা দিয়ে হোটেলে ফিরেছি। থামেনি ক্লান্তিহীন পথচলা। নানা দেশের, মানুষের জীবন জগৎ, অনুভব অনুভূতি, তাদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি দেখে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি দিনে দিনে ভারী হয়েছে। কত কিছু দেখে তো আমার অবাক হবার পালা। কখনো মনে হয়েছে, স্বপ্ন বলতে আদতে কিছু কি আছে! সবই তো বাস্তব। “হয়তো আমি যাপন করছি কারো কল্পিত জীবন। আবার আমার কল্পনাকে অন্য কেউ সত্যি করেছে। ” সেসব দেখে শুনে ভ্রমণ শেষে নীড়ে ফেরা। সময়ের স্রোতে সেসব মিলিয়ে যায় কোন দূর অজানায়। কিন্তু ফেলা আসা পথের যে ছবি আঁকা হয়ে গেছে হৃদয়ের মধ্যিখানে, মন ও মননে, যেই উপলব্ধি গেড়ে বসেছে, নিজের ভেতরকে রাঙিয়ে দিয়েছে, প্রসারিত করেছে মানসলোক, তার ঝংকার তো ফুরায় না। সেখানে কখনো মানুষ প্রধান, কখনো প্রকৃতি। সেসবের ফ্লেভার তুলে ধরার জন্য কোথায়ও এসেছে অফবিট রেসিপি ও। এতে যে ধরা পড়েছে বৃহত্তর জীবন-চিত্র। ফলে একজনের হয়েও এসব অন্য অনেকের টুকরো স্মৃতি-কাহিনি। সেসব ছোটো ছোটো গল্প, ভাবনা, মনের আরাম, নয়নলোভন দৃশ্য অন্যদের সাথে ভাগ করে নিলে সেসবের স্বাদ অন্যরাও খানিক উপভোগ করতে পারে। তাতে এ ভ্রমণ কথার স্বাদ বাড়ে। তাই ভেবেছি সেসব যদি মায়াবী অঞ্জন মেখে বর্ণে, শব্দে, বাক্যে, কথায় প্রকাশ করা যেত! সেই ভাবনায় কলমের সাথে মিতালি। অবাক এক পথিকের সেই আটপৌরে ঘোরা ঘুরির আলপনা আঁকতে গিয়ে তৈরি হয় রংধনুর সাতরঙা গদ্য। একে সঙ্গী করে যদি কোন পাঠক বেরিয়ে পড়ে অজানা-অচেনা দেশ-দেশান্তরে ভালোবাসার টানে! বলতেই হয়, ভ্রমণ পথের আলপনা পুরোটা আঁকা হলো না। কিছু না হয় খসড়া হয়ে তোলা থাকলো আগামীর খাতায়, পরের বারের জন্য।
Abul Kasem- জন্ম কুমিল্লা জেলার ঝাকুনিপাড়া গ্রামে ১লা জুলাই ১৯৫৫-তে। প্রাইমারি স্কুল থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সরকারি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। দৈনিক বাংলা (অধুনালুপ্ত), দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা (অধুনালুপ্ত), বাংলা একাডেমি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর আলোচনা, প্রবন্ধ, গল্প, গবেষণা-নিবন্ধ প্রভৃতি ছাপা হয়েছে। এযাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।