দেশ বিভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা, 'ঘটি- বাটি-সানকি উপন্যাসটিতে ১৯৪৬ সালের কোলকাতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি পরিবারের দেশত্যাগ এবং তদ্জনিত সমস্যাসংকুল জীবন অতিবাহিত করার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। মূলতঃ আনোয়ারা বেগম এবং হক সাহেবের জীবন ও স্বপ্ন পরবর্তীকালে কীরূপ দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এবং উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোর বালক স্মরণ কীভাবে তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জানার চেষ্টা করেছে, তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কখনো মায়ের সঙ্গে সংলাপে ,কখনো-বা বাবা-মায়ের কথোপকথন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা অবলোকন করে ঘটনার সারাংশ তুলে আনার চেষ্টা করে হয়েছে। অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিতব্য কোলকাতার দাঙ্গায় মেজো ভাইকে হারিয়ে হক সাহেব ও আনোয়ারা বেগম রাজশাহীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিয়ে স্থায়ী জীবনযাপনের প্রত্যাশায় পূর্ববাংলায় পাড়ি জমান। উপন্যাসটি'র সূচনা এখান থেকেই! এ বাংলায় আসার পর থেকে শুরু হয় যথার্থ অস্তিত্বের জন্যে সংগ্রাম (authentic existence) , তার মোকাবেলা (struggle) এবং নিজেদের প্রদত্ত (given) অবস্থানকে ছাড়িয়ে ( self-transcendence) আত্ম-মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার এক নিদারুণ প্রচেষ্টা ! কিন্তু একদিন ঘুম থেকে জেগে পরিবারটি শুনতে পায়, তাঁদের দেশ ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেছে! তাঁদের দেশ এখন আর নিজের দেশ নয়! জন্মভূমি, কৈশোরের দিনালিপি, স্কুল, খেলার মাঠ তথা বাবা-মায়ের কবর এবং আত্মীয়স্বজন থেকে তাঁরা এখন এক বিচ্ছিন্ন (alienated) দ্বীপ হয়ে গেছেন! এখন থেকে পাসপোর্ট -ভিসা করে নিজ মাতৃভূমিতে যেতে হবে শুনে পরিবারটি যারপরনাই মনস্তাপিত(anguished)!
এ'দিকে এ বাংলার সামাজিক সত্তা তাঁদেরকে গ্রহণ করতে পারে নি! 'ঘটি' নামক শব্দটি দিয়ে তাঁরা যে ভূমিতে পা রেখেছেন, সেখানেও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবেও নিদারুণ সংকট মোকাবেলা করে গেছেন। উপন্যাসটিতে 'ঘটি' এক প্রজন্মের জীবন-সংগ্রাম, 'বাটি' দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রশ্নযুক্ত জীবন এবং 'সানকি' কথাটি দিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের চৈতন্যবোধ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের সন্তান সারোয়ার জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে বি.এ (অনার্স) এবং এম. এ সমাপ্ত করার পর বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি এনসিটিবিতে বিশেষজ্ঞ (মাধ্যমিক) পদে কর্মরত আছেন।বই পড়া ও লেখালেখির পাশাপাশি ভ্রমণ,ফটোগ্রাফি, ভায়োলিন ও পিয়ানো বাজিয়ে থাকেন। স্বাধীনতা এবং নিঃসঙ্গতা -এ দুটি শব্দ তাঁর খুব প্রিয় এবং সেভাবেই নিজকে খোলসের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে তিনি ভালোবাসেন।