সময়ের পিঠে সাওয়ার হয়ে আমরা সকলে এগিয়ে চলছি নিজ নিজ গন্তব্যে। চলার পথে অনেকে নানা ঝড়ঝঞ্ঝার কবলে পড়ে মাঝপথেই হারিয়ে যায়। আবার কেউ ঘূর্ণিপাকের উত্তাল তরঙ্গের মধ্যেও সুরক্ষিত থাকে। সৃষ্টিকর্তা যাকে রক্ষা করবেন, শত বিপদেও তার কোনো ক্ষতি হয় না। জীবন কেবল আনন্দ হই-হুল্লোড় নয়। জীবনে অনেক অচিন্তনীয় ঘটনা ঘটে এবং সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। বিখ্যাত শিক্ষা সংস্কারক শিব খেরা বলেছেন, ‘একটি পরিষ্কার দিনে নদীর জলে শত শত নৌকা বিভিনড়ব দিকে ঘুরে বেড়ায়। যদিও বাতাস এক দিকেই বয় তবুও পালতোলা নৌকাগুলো ভিনড়ব ভিনড়ব দিকে যাতায়াত করে। কীভাবে করে? এটা নির্ভর করে কীভাবে তাদের পালগুলো রয়েছে তার ওপর এবং যিনি নৌকা চালান তিনি পালগুলো নির্দিষ্ট দিকে যাওয়ার জন্য সেভাবে ঘুরিয়ে ধরেন। এই অবস্থা আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা বাতাসের গতিপথ বদলাতে পারি না কিন্তু আমরা জীবনের পাল কীভাবে লাগাব যাতে বাতাসের গতির সুবিধা নিতে পারি, তা আমরা নির্ধারণ করতে পারি।’
তাই জীবনের চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপ জেনেবুঝে ফেলতে হবে। অন্ধকারে পা ফেললে বিপদ অবধারিত। বর্তমান প্রজন্মের মানুষ বই পড়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সবকিছু একটি ছোট্ট যন্ত্র মোবাইল ফোনে দেখা যায়। মোবাইল বা কম্পিউটার ফাইলে দীর্ঘকাল কোনো কিছু ধরে রাখা যায় না। সেখানেও ভাইরাসের আμমণ ঘটে। একদিন না একদিন মানুষ আবারও জ্ঞানের ভাণ্ডার বইয়ের দিকে ফিরে আসবে। তখন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাথে পুস্তক হবে একমাত্র গাইড। ‘উইলিয়াম জেমস মনে করেন, মানুষ তার সম্ভাবনার দশ থেকে বারো শতাংশ ব্যবহার করে। বেশির ভাগ মানুষের জীবনেই সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো যে তাদের সম্ভাবনা অধিকাংশ অবশিষ্ট থাকতেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।’ এই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হওয়ার একমাত্র পথ হলো বই। ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞানÑসবকিছুর অমূল্য তথ্য ও বাণী পুস্তকাগারে সঞ্চিত থাকে।
আজ আমরা সেই মূল্যবান সম্পদকে ভুলতে বসেছি। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভবিষ্যৎ মানুষের রূপরেখা বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন, মানুষের দেহের সচল অঙ্গগুলোর মধ্যে একমাত্র হাতের আঙুলগুলোই মজবুত হবে এবং মাথা হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বড়। হাত ও মাথা ছাড়া অন্য অঙ্গসমূহ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাবে। কারণ হাতের আঙুল দিয়ে সারাক্ষণ যন্ত্রের বাটনে চাপ দিতে হবে আর মস্তিষ্ক হবে হেড অফিস। সেখান থেকে রচিত হবে যাবতীয় কাজের পরিকল্পনা। ঠিক যেন চন্দ্রপৃষ্ঠের কালো দাগের ন্যায়। হয়তো আগামী একশ বছর পরে আমরা পৃথিবীর বাসিন্দা এলিয়েনদের মতো হয়ে যাব। চিত্তবিনোদন শেষ হবে কিন্তু কৌতূহল বেড়ে উঠবে। তখন মানুষ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াবে।
বইটিতে এই উপমহাদেশের তিনটি দেশ বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনচরিত তুলে ধরেছি। পাশে খারাপ লোকগুলো চিরকালই তাদের হিংস্র থাবা নিয়ে এগিয়ে যায় ভালো মানুষদের দিকে। শেষে জয়যুক্ত না হলেও ধ্বংসের মুখোমুখি পর্যায়ে নিয়ে যায় জনতা এবং জনপদকে। ঐতিহ্যবাহী মানিকগঞ্জ জেলার পদ্মা ও যমুনার পতিতমুখে শিবালয় উপজেলা। এখানকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র পুত্রসন্তান, যার মস্তিষ্কের গঠন কাঠামো এক জটিল প্রμিয়ায় তৈরি। চিকিৎসাজগতে এটা নিয়ে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তবু স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাধ্যমে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে। তার স্বপেড়বর রানি শিশুবেলার খেলার সাথিকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়। বন্ধুর সাথে নেপালে বেড়াতে গিয়ে ঘটে যায় এক মহা অঘটন। স্মৃতিবিভ্রাটের পরবর্তী ঘটনাসমূহ আমি তুলে ধরেছি বইটিতে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সকল ধর্মের মানুষদের সহযোগিতা, সহনশীলতা এবং সহমর্মিতাকে মানবতার মহান আদর্শে উনিড়বত করার চেষ্টা করেছি। ইতিপূর্বে চমনপ্রকাশ থেকে আমার লেখা কয়েকটি বই অমর একুশে বইমেলা প্রকাশিত হয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রকাশনা এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। লেখার মধ্যে অনেক ভুলত্রুটি থেকে যেতে পারে। এ জন্য আমি বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।