সমাজের গহীনে সামিয়ার মতো অতি সহজ সরল নারীরা বসবাস করে সাংসারিক মানসিকতা নিয়ে। অথচ ভয়ংকর সত্য হলো, সামিয়ার মতো মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ঠকে যায় তাদের জীবনের কাছে।
প্রথম জীবনে প্রেমিকের অবহেলায় মন ভেঙেছে স্বচ্ছ কাঁচের মতো শত সহস্র টুকরো হয়ে। তারপর লটারির মতো ভাগ্যগুণে প্রাপ্ত স্বামী নামের পুরুষের বিকৃত যৌন কামনার সঙ্গী হয়ে জেনে গেছে, তার জন্ম শুধুই সয়ে যাওয়া সবকের শ্লোকে গাঁথা। শিক্ষিত স্বামী আর পাকা দালানের আভিজাত্যের নিচে চাপা পড়ে অদৃশ্য কষ্টে ছটফট করেছে। তখন সমাজ তো দূরের কথা, বাবা-মা ভাইবোন কিংবা নিকটাত্মীয় কেউ বুঝতে পারেনি তার চাপা আর্তনাদ।
মেনে আর মানিয়ে নিতে নিতে একসময়ে 'সংসারের মায়া নামক আফিমে বুঁদ হয়ে আঁকড়ে পড়েছিল অবহেলার বিছানায়।
নিভে যাওয়ার আগে বাতি যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি সামিয়াও একদিন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ততদিনে জীবন থেকে বহু বসন্ত ঝরে গেছে সংসার নামক আবু গারাইব কারাগারে।
যে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদে নারীর চরিত্র কিংবা পুরুষের যৌন অক্ষমতাকে একমাত্র কারণ হিসেবে ট্যাবু প্রচলিত, সেখানে নিভৃতে ঘটে যাওয়া নির্মমতা নিয়ে কেউ ভাবে না। না, আসলেই কেউ ভাবে না কখনও।
সমাজ কখনও সামিয়াদের মতো নারীদের প্রতিবাদী হয়ে ওঠার কারণ খোঁজ করেনি। বরং এই সমাজ তখন উপহাসের উপসর্গ পেয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে বিদগ্ধজনকে।
নিভৃত দুনিয়ায় পুরুষ কখনও শয়তান কখনও ভগবান। সাইফুলের মতো পুরুষেরা সত্যিই জানে না সামিয়ার মতো নারীর জীবনে কেন ভগবানের মতো পুরুষ জোটে না। সাইফুলের মতো পুরুষেরা সামিয়াদের জন্য সুরক্ষা ও ভালোবাসা হয়ে জন্মায় তা হয়তো সমাজ কখনও বুঝতে পারে না। তাই তো সামিয়াদের মতো নারীর জীবনে দ্বিতীয় পর্ব হয়ে ওঠে সামাজিক ট্যাবু।
ফিরিয়ে দেওয়া মানুষকে কখনও কাছে ডাকতে নেই। এই কথাটি আবারও প্রমাণ হয়েছে সামিয়ার জীবনে শৈশবের প্রেমিক আবির ফিরে আসতে চাওয়া ক্ষেত্রে। অসময়ে অপ্রয়োজনীয় প্রেম সন্ত্রাসী যেন সামিয়াকে করেছে বিধ্বস্ত। তিলে তিলে দিয়েছে অমানসিক যন্ত্রণার বিষাক্ত ছোবল।