লেখালেখির অভ্যাসটা বেশ অনেকদিন ধরেই আমার উপর চেপে বসেছে। আমি বিজ্ঞানের মানুষÑআমার বসবাস ল্যাবরেটরির সাদা আলোর নিচে। সেই জীবনটা বেশ কঠিন পরিশ্রমের। প্রায়শই রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে শরীরটার উপর। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণত আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারের একটা কফি শপে ঢুকে পড়ি। গরম ধোঁয়া তোলা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপটা বের করে আরম্ভ করি লেখালেখি। বেশির ভাগ সময়ে সেই গল্পগুলোতেও চলে আসে আমার ল্যাবের বিজ্ঞান।
এতকিছু সত্ত্বেও একটি বিশেষ ঘটনা আমাকে প্রচণ্ড রকমের নাড়া দেয়। আমি যেন কিছুতেই বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না শুরু থেকেই। আর তা হলো র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আবরারের মতো একটি মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যু। নিজের অজান্তেই আবরারকে নিয়ে কিছু একটা লেখা শুরু করি। এক সময় তা একটি বইয়ের পাণ্ডুলিপির আকার ধারণ করে। ভাবলাম এ পাণ্ডুলিপিটা বই আকারে ছাপা হওয়া দরকার। ফ্যাসিস্ট সরকার কিভাবে মেধাবীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তার একটা দলিল থাকা দরকার।
পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মহাকাল-এর স্বত্বাধিকারী ও প্রকাশক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করি। উনি বললেন, ‘খুবই ভালো এবং সময়োপযোগী একটি পাণ্ডুলিপি। আমরা এ বই ছাপতে রাজি আছি।’
ব্যাস, এভাবেই শুরু হয় ‘চেতনায় আবরার ফাহাদ’ শিরোনামের বইটি প্রকাশের কাজ। এ বইটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ র্যাগিংয়ের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে বুয়েটের তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ যেভাবে রাজনীতির শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবরার ফাহাদ রেখে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক কঠিন বার্তা। সে বার্তা এক সময় ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে। গড়ে ওঠে ফ্যাসিস্টবিরোধী জোরালো আন্দোলন। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এই বইটি পড়ে পাঠক জানতে পারবেন যেভাবে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আবরারের মায়ের আর্তনাদ, তাঁর বুকফাটা কান্না আর ভাইয়ের অশ্রুশিক্ত নয়ন যে কারো হৃদয়কে ছুঁয়ে যাবে। আশা করি বইটি সবার কাছে ভালো লাগবে। আর তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
ফারজানা ববি চুমকি। ১৯৯৭ সালের ১০ অক্টোবর তারিখে কুষ্টিয়ার শিমুলিয়া গ্রামে জনন্মগ্রহণ করেন। চার বছর বয়সে মা হাসিনা পারভীন বানীকে হারান। এরপর বাবার হাত ধরে পথ চলা শুরু করেন। ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর বাবাকেও হারান। পেশাদার জীবনে তিনি একজন প্রকৌশলী, গীতিকার ও সুরকার। ঝড়াকুড়ি তার প্রকাশিত প্রথম বই।