নিজের ভগ্নাংশ নিয়ে এসেছি প্রবাসে, প্রায় সবটুকু রয়ে গেছে দেশে অথবা নিজেরই বুকে। এই গ্রন্থ– ভ্রমণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে সেই ভাবনামঞ্জরি। কানাডার বিভিন্নস্থানে ভ্রমণ উপলব্ধি, দেশ, দেশের মানুষ ও সমাজের অভিজ্ঞতার দীর্ঘশ্বাস, গল্প, রক্তবমি আর অবিরল সমুদ্রমরালের মতো জীবন অথবা নোনাজলের আখ্যান এটি। গ্রন্থটি ঠিক ভ্রমণের গান নয়, নয় জীবন উপাখ্যানও। এই মুক্তগদ্যকে পরিযায়ী ভাবনামঞ্জরি বলা চলে; অনেকটাই দিনপঞ্জির মতো লেখা শুরু হয়েছে ২০২৩—এর ডিসেম্বর থেকে ২০২৪—এর জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এর বাইরে দুয়েকটি পর্ব সংযুক্ত হয়েছে কেবল। পাঠক জানবেন– দেশ সারাক্ষণ আমার বুকেই রয়েছে; কিন্তু তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থেকেও যে দেশ আমার চাকরি ফেরত দেয়নি, দীর্ঘ সাত মাসে কোনো তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে আমাকে দোষী অথবা নির্দোষ বলতে চায়নি, সারাজীবন সাংস্কৃতিক কাজ, লেখালেখি, শিক্ষকতা, প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে থাকার পরও নিরাপত্তা দিতে পারেনি, বিমানে ওঠার আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে সেই দেশটি যে গভীর বেদনায় আমি ছেড়ে এসেছি, মৃত্যু পর্যন্ত তার ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে। সেই ক্ষতের চিহ্ন এই গ্রন্থেও পাঠক পাবেন।
বিগত বছরগুলোতে তোয়াজের তকমায়, তোষামোদের তুমুল প্রতাপে, দুর্নীতির দুঃশাসনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন দেশের প্রকৃত কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, এমনকি রাজনীতিক পর্যন্ত! স্বার্থবাজ ক্ষমতালোভী, চতুরদের ভিড়ে তখন বাংলা কবিতার অবিনশ্বর স্বর, সাহিত্য সম্পাদনার ত্রিকালদর্শী একরোখা ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব আবু হাসান শাহরিয়ারকে মনে পড়ছিলো। গ্রন্থটি হয়তো সামান্যই– তবু শ্রদ্ধা—ভালোবাসা জানাতে এই অর্ঘ্য তাঁকে নিবেদন করছি।