লেখকরা আর দশজন মানুষ থেকে কিঞ্চিত আলাদা। তাই তাদের যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, রঙ্গ-রসিকতাও একটু আলাদা। কোনো কোনো সময় এসবে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিস্থিতির ‘শিকার’ হন শুধু। এসব পরিস্থিতি স্বীকার বা অস্বীকারও করতে হয় না অনেক লেখকের। শুধু উৎসাহী কেউ উঁকি দিলে দেখতে পান দূর দিগন্ত!
দুই ভাই‘দ্বয়’কে কৌত‚হলটা ছিল দীর্ঘদিনের। লেখক ও সাংবাদিক আহসান কবির, তার ছোট ভাই কার্টুনিস্ট কাম লেখক আহমেদ কবীর কিশোর। একদিন কিশোর ভাইকে প্রশ্ন করলাম, ‘আহসান কবির হ্রস্ব ই কারে নাম লিখলে আপনি কেন দীর্ঘ ইকার ব্যবহার করবেন?’
হেসে জবাব দিলেন, ‘তিনি আগে এসেছেন যে!’
আগে বলতে বাংলা বর্ণ তথা যতিচিহ্নে হ্রস্ব ইকার প্রথমে, এরপরই দীর্ঘ ইকার! এমন নজির আরেকটা দেখেছি। ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের লেখক ও সেবা প্রকাশনীর প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই কাজি মাহবুব হোসেন। তিনি ওয়েস্টার্ন কাহিনি লেখক হিসেবে খ্যাত। এঁদের বাবা শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন সন্তানের নামকরণের ক্ষেত্রে এমন আগ-পিছ তত্ত¡ ব্যবহার করেছিলেন কি না জানা নেই!
একসময়ের জনপ্রিয় একটি দৈনিকের সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র হিসেবে প্রকাশিত ১৬ পৃষ্ঠার ম্যাগাজিন একবার ‘মাসুদ রানা’ সংখ্যা করেছিল। সেখানে লিখেছিলেন পাঠকরাও। কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম না নিয়েই একজন লেখক (?) মাসুদ রানা কীভাবে-কেন তার প্রিয় লেখক এমন সব গুণগানের ফিরিস্তি দিয়ে গেছেন! বিভাগীয় সম্পাদকও কী বুঝে সেটা ছাপিয়ে দিয়েছিলেন জানি না।
কাজী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মিলা মাহফুজা। ঘটনাটি আশির দশকের। মিলা মাহফুজা ও তাঁর স্বামী ‘সেবা রোমান্টিক’খ্যাত খন্দকার মজহারুল করিম স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে চুটিয়ে অটোগ্রাফ দিতেন। কাজীদা বইমেলার শেষদিকে কেন যেতেন তা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন একবার। জবাবে কাজীদা স্মিত হেসে বললেন, আমি তো আপনাদের মতো অনেক অটোগ্রাফ দিতে বইমেলায় আসি না। একটা অটোগ্রাফ দিতে আসি!
শহীদুল জহির অন্যরকম একটি অপ্রাপ্তি ও হাহাকার নিয়েই মারা গেছেন। এটা নিঃসন্দেহে করুণ রস। একটি ‘অন্যরকম’ উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। পুরো উপন্যাসে কোনো দাঁড়ি থাকবে না। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত কমা’র (,) ব্যবহার। প্রথম সংস্করণে উপন্যাসের শেষে প্রকাশক কিংবা প্রæফ রিডার ঠিকই দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় সংস্করণে এ বিচ্যুতি সারানোর চেষ্টা করেছেন। এবারও শেষে ঠিকই দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন প্রকাশক। লেখক বেচারা আর কী করেন!
জন্ম : ০২ জানুয়ারি, ১৯৮৩-তিতাহাজরা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। বেড়ে ওঠা পাহাড়তলী, চট্টগ্রামে। লেখাজোখার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। প্রথম লেখা ছাপা হয় মাসিক রহস্যপত্রিকায়। ২০০০ সালের মাঝামাঝি লেখালেখিতে সচেতনভাবে মনোযোগী হন। তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিকসহ অজস্র পত্রপত্রিকায়। সমানতালে লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনেও। পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদনা করছেন পাঠকপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রকাশ’। গল্প লিখতে এবং গল্পকার পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি রম্য ধাঁচের রচনায়ও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। দৈনিক প্রথম আলোর তুমুল জনপ্রিয় ফান ম্যাগাজিন আলপিন-এর মাধ্যমে রম্য লেখার সূচনা। এরপর থেকে লিখেছেন দৈনিক পত্রিকার ক্রোড়পত্র হিসেবে প্রকাশিত বিভিন্ন রম্য-বিদ্রুপ সাময়িকীতে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, লেখালেখি এবং সাংবাদিকতাকে। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে সাব এডিটর পদে কর্মরত।