এমনই, কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। কোথাও কারও কারও দারিদ্রসীমার নিচ দিয়ে যায়। আবৃত্তিওয়ালা ‘আমজাদ শ্রাবণ’র জীবনের স্রোত প্রবাহও অনেকটা তেমনই! নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে সুশিক্ষার দিকনির্দেশনা যতটুকু আসে, তার চাইতে বেশি আসে টাকা কামাই করার নির্দেশনা। কিন্তু তার মনের বিশাল আকাশে যে হাজার হাজার পাখির কিচিরমিচির ডাক, রঙধনুর রঙিন রঙে পাখনা মেলে কথা, ছন্দ ও কবিতার গাঁথুনি মালা,পরিবার তো আর সেই কাব্য-সংস্কৃতির ছোট্ট ছেলেটির মনো-বাসনা বুঝার ক্ষমতা রাখে না। গান শোনা, টিভি দেখা, কবি হওয়া—এসব নাকি বেদাতি কাজ! অথচ গানই তো টানতো বেশি বেশি তাঁকে। তাই হামদ-নাত, ইসলামি সঙ্গিত দিয়েই শুরু।
একটু একটু করে প্রাইমারি শেষ করে মাধ্যমিকের শুরুতেই পরিচয় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ বীক্ষণ এর সাথে। শুরু হয় এক মহা সমুদ্রের অমৃতাচরণ গ্রহণ। সেই থেকে পরিবারের চেয়ে বেশি বিচরণ বাইরের মানুষের সাথে। নানা রঙ, নানা বর্ণ, নানা আচরণ, ক্ষোভ, লোভ, হিংসা, অহংকার, ক্ষমতা, অপব্যবহার, ছলচাতুরী, মিথ্যের বেসাতি,শত্রু-মিত্র, আপন পর খেলা, জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই, বেইমানি, বিশ্বাস-ঘাতকতা ইত্যাদি সব সিলেবাসের সম্মুখীন হয়ে জীবনকে উপলব্ধি করেছে অন্য এক অপরিমেয় অদৃশ্য শক্তির সহযার্থে!
এই সব দুঃখ, শোক, হর্ষ বিষাদের প্রতিটা অধ্যায় পাঠ করতে করতে শ্রাবণের বুক চিড়ে, নয়নের নোনাজলে লেখা হয় প্রতিটা সময়ের পরিচ্ছেদ প্রকল্প। যেখানে প্রেম-বিরহ, হাসি-কান্না, দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, মানবতা, হিংস্রতা ও সমসাময়িকতার চালুনিতে ছেঁকে তুলে আনে কবি তার শ্রাবণ বিরহী মেঘমালা’র চিত্রপট।
শোক বা বিরহ শুধু প্রেমিকার আঘাতেই নয়, ভালবাসা প্রেম তো সমগ্র জীবনের এক তৃতীয়াংশ মাত্র। বাকি থাকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বায়ন! হেরে যাওয়া জীবনের কত না বলা গল্পের পাণ্ডুলিপির প্রতিটি পাতায়।
সেই সব প্রতিটি পাতার আত্মগোপন কথনই সুরলিপিতে ঝংকৃত হয় আবৃত্তিওয়ালা ‘আমজাদ শ্রাবণ’র গাঁথুনিতে।
কবিতা লিখতে লিখতে আর আত্মগোপনে গোপনে তা বারংবার পাঠ করতে করতে কখন যে আবৃত্তিওয়ালা হয়ে ওঠে— তা প্রকৃতিই জানে।
ময়মনসিংহের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময়ের পথ চলায় নানাবিধ অভিজ্ঞতার সঞ্চয় এই শ্রাবণ বিরহী মেঘমালা।
আবৃত্তিকে ভালোবেসে, আবৃত্তির চালচলনে লেখা কবির মনের নানাবিধ বেদনার চিত্রপট। অত্যন্ত সাবলীল সহজ সরল ভাষায় পাঠক ও আবৃত্তি পছন্দ করা পাঠক বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যেই এই সহজবোধ্যতা।
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া তো দুষ্কর। সেই সব মনের বেদনা জাগানিয়া বিনিদ্র প্রহরের একান্ত আপনার গহীন-গভীর উচ্চারণ ‘শ্রাবণ বিরহী মেঘমালা’ (আবৃত্তির কবিতা) ভালো লাগলেই সার্থকতা কবি, আবৃত্তিওয়ালা, উপস্থাপক, মঞ্চকর্মী ‘আমজাদ শ্রাবণ’র।